বিংশ শতাব্দীর প্রভাবশালী বাঙালি কবি ও প্রাবন্ধিক বুদ্ধদেব বসুর আজ জন্মদিন। তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তার মাতামহের বাড়ী কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ভূদেব বসু পেশায় ঢাকা আদালতের উকিল ছিলেন। মাতার নাম বিনয়কুমারী। বুদ্ধদেব বসুর মাতামহ চিন্তাহরণ সিংহ ছিলেন পুলিশ অফিসার। তার পৈতৃক নিবাস ছিলো বিক্রমপুরের অর্থাৎ বর্তমান মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর গ্রামে।
বুদ্ধদেব বসু ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সচ্চিদানন্দ ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় আসেন এবং প্রায় দশ বৎসর ঢাকায় শিক্ষালাভ করেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আইএ পাস করেন।[inside-ad]
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণিতে বিএ অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। অধ্যাপনার মাধ্যমেই তার কর্মময় জীবন শুরু। জীবনের শেষাবধি তিনি নানা কাজে-কর্মে ব্যাপৃত রেখেছেন। শিক্ষকতাই ছিলো জীবিকা অর্জনে তার মূল পেশা। কর্মময় জীবনের শুরুতে স্থানীয় কলেজের লেকচারের পদের জন্য আবেদন করে দু'বার প্রত্যাখ্যাত হলেও ইংরেজি সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য পরিণত বয়সে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে সারগর্ভ বক্তৃতা দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা ভাষার তুলনামূলক সাহিত্য সমালোচনার ক্ষীণস্রোতকে তিনি বিস্তৃত ও বেগবান করেন।
১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতা রিপন কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্টেটসম্যান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন।
এছাড়াও, তিনি উচ্চ মানের সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বুদ্ধদেব বসু প্রভুগুহ ঠাকুরতা, অজিত দত্ত প্রমুখকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।