বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক বিমল মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলায় এত সহজ করে আর কারো লেখায় ইতিহাসকে কথা বলতে দেখা যায়নি। বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষাতেই সমান দক্ষতায় সাহিত্য রচনা করেছেন তিনি। সারা জীবনে তিনি প্রায় পাঁচশো ছোট গল্প ও একশো উপন্যাস লিখেছিলেন।
বিমল মিত্র ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ কলকাতার চেতলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি বাড়ি ছিলো নদীয়ার মাজদিয়াতে (বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগণা)। তার বাবার নাম সতীশ চন্দ্র মিত্র।
বিমল মিত্রর প্রাথমিক পড়াশোনা চেতলা স্কুলে। পরে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তার বাবার ইচ্ছা ছিলো ছেলে চাটার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট হোক। কিন্তু কিছুদিন ক্লাস করেই তিনি চাটার্ড অ্যাকাউনট্যান্সি ছেড়ে দিয়ে বাংলায় এমএ পড়ার জন্যে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে ওস্তাদ আব্দুল করিমের গলায় শোনা ‘যমুনা কে তীর’ ও ওস্তাদ ফৈয়জ খানের গলায় শোনা ‘ঝন ঝন ঝন ঝন পায়েল বাজে’ তার আগামী সাহিত্যিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিলো। তার প্রথম উপন্যাস ‘চাঁই’ সেভাবে পাঠকের মনে দাগ কাটতে পারেনি। তার লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ‘সাহেব বিবি গোলাম’। তার অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘একক দশক শতক’ আর ‘চলো কলকাতা’ ‘পতি পরম গুরু’, ‘এই নরদেহ’, ‘এরই নাম সংসার’, ‘মালা দেওয়া নেওয়া’, ‘তোমরা দুজনে মিলে’, ‘গুলমোহর’, ‘যা দেবী’, আসামী হাজির’ ইত্যাদি।
বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিমল মিত্র একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি চিরকালের মত হারিয়েছিলেন। এই সময় থেকেই অনেক নকল ‘বিমল মিত্র’ কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় গজিয়ে উঠেছিলো। প্রকাশকরা সে সব লেখা প্রকাশও করতেন। ভালই বিক্রি হয়েছিলো সে সব বই। এদিকে আসল বিমল মিত্রকে পড়তে হয়েছিলো চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে সঙ্গে জুটেছিলো লাঞ্ছনাও। প্রায় পাঁচশোটি ছোট গল্প ও শতাধিক উপন্যাসের লেখক বিমল মিত্র তার ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেছিলেন জীবনে।
নিজের সম্পর্কে নিজেই মূল্যায়ন করেছেন বিমল মিত্র “…সত্যিই আমার কিছু হয়নি। অবশ্য তা নিয়ে আমি দুঃখও করি না। কারণ জীবনে যে কিছু হতেই হবে তারই বা কী মানে আছে। আকাশের আকাশ হওয়া কিংবা সমুদ্রের সমুদ্র হওয়াটাই তো যথেষ্ট। লেখক আমি হতে না-ই বা পারলাম, মূলত আমি একজন মানুষ। মানুষ হওয়াটাই তো আমার কাছে যথেষ্ট ছিলো।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিমল মিত্র মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে চেতলায় তার নিজের বাসভবনে মেয়ে শকুন্তলা বসুর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘বিমল মিত্র অ্যাকাডেমি’।