আজ কীর্তিমান শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর জন্মদিন। বহুমাত্রিক ও নান্দনিক এই মানুষটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম নিত্য গোপাল কুণ্ড হলেও সবার কাছে তিনি নিতুন কুণ্ডু নামেই পরিচিত। তিনি মূলত, একজন চিত্রশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা ও উদ্যোক্তা। এই গুণী ভাস্কর সাবাশ বাংলাদেশ, সার্ক ফোয়ারা প্রমুখ বিখ্যাত ভাস্কর্যের স্থপতি।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তার লেখাপড়ায় হাতেখড়ি দিনাজপুর বড়বন্দর পাঠশালায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন দিনাজপুর শহরের গিরিজানাথ হাইস্কুলে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রিকুলেশন পাস করেন।
তদানীন্তন ঢাকা আর্ট কলেজে (বর্তমানের চারুকলা ইন্সটিটিউট) তিনি পড়ালেখা করেছেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। নিতুন কুণ্ডু নিজের শিক্ষা অর্জন করেছিলেন নিজের আয়ে, সিনেমার ব্যানার এঁকে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকার চারুকলা ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন এবং ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিত্রশিল্পে স্নাতক সমমানের পাঁচ বছরের কোর্স সমাপ্ত করেন।
এরপর নিতুন কুণ্ডু ঢাকার মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে স্বাধিকার আন্দোলনের সময় তিনি বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য ও প্রচার বিভাগে ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘সদাজাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’-এই স্লোগানে তার আঁকা পোস্টারটি অমর হয়ে আছে।
স্বাধীনতার পর তিনি আর চাকরি করেননি। স্বাধীনভাবে সৃজনশীল কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে তোলেন ‘অটবি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে যা বাংলাদেশের একটি বৃহৎ শিল্প-প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন নিতুন কুণ্ডু। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ, এশিয়া কাপ ক্রিকেট পুরস্কার প্রভৃতি। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর বহুমাত্রিক এই শিল্পী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।