২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের সালের জন্য বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী এবং প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সেই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু। তিনি পেশায় নার্স। নিজের চেষ্টায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
বিবিসির তালিকাটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এমন সব নারীকে সম্মানিত করেছে, যারা তাদের কঠিন পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন—মহাকাশে আটকা পড়া মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিক অ্যাথলেট রেবেকা আন্দ্রে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, সঙ্গীত শিল্পী রায়ে, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নাদিয়া মুরাদ, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ট্রেসি এমিন, জলবায়ু কর্মী আডেনিকে ওলাডোসু রিভার, লেখক ক্রিস্টিনা রিভার গার্জাসহ আরও অনেকে।
জলবায়ু কর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি—এই পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের রিক্তা আক্তার বানু
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন নার্স রিক্তা আক্তর বানু। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স তিনি।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে রিক্তার কোলজুড়ে আসে প্রতিবন্ধী কন্যা তানভীন দৃষ্টিমনি (ব্রহ্মপুত্র)। তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে লেখাপড়ার জন্য ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ তিনবার তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে তাড়িয়ে দেয়। এরপর রিকতা চেষ্টা করেন তানভীনকে পুনরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে, কিন্তু বহু অনুরোধ সত্ত্বেও, কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষকরা তাকে আর পড়াতে চাননি।
এই যন্ত্রণা থেকেই রিক্তা নিজের জমি বিক্রি করে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে গড়ে তোলেন রিকতা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। স্কুলটিতে এখন প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে।
প্রাথমিকভাবে এই স্কুলটি অটিস্টিক এবং শেখার প্রতিবন্ধকতা থাকা শিশুদের জন্য নির্মিত হলেও, এখন এখানে বুদ্ধিমত্তা ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা শিশুদেরও শিক্ষা প্রদান করা হয়।
রিক্তা আক্তার বানুর এই উদ্যোগ শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নয়, বরং প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে।
এমন একটি উদ্যোগের মাধ্যমে রিক্তা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে সমাজের ধারণা বদলে দিতে ভূমিকা রাখছেন এবং তিনি তার সংগ্রামী যাত্রায় দেশের অন্য নারীদেরও অনুপ্রাণিত করছেন।
বিবিসি প্রতি বছরই বিশ্বের প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী ১০০ নারীর প্রকাশ করে। তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র, সংবাদ নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার তৈরি করে বিবিসির প্রতিটি প্লাটফর্মে প্রকাশ করা হয়। বিবিসির নিজস্ব একটি গবেষণা দল ১০০ নারীর তালিকা তৈরি ও সুপারিশ তৈরিতে কাজ করেন।
