ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী বাঘা যতীনের জন্মদিন আজ। তার প্রকৃত নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতা শরৎশশী।
যতীনের মা বিধবা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। সমসাময়িক বাঙালি চিন্তাবিদদের রচনাবলীর পাঠিকারূপে তিনি অবগত ছিলেন দেশের মঙ্গলের পথ এবং সেইমতো তিনি লালন করতেন তার সন্তান দু'টিকে। পরোপকার, সত্যনিষ্ঠা, নির্ভীক চিন্তায় ও কর্মে অভ্যস্ত যতীন পড়াশোনা ও খেলাধুলার পাশাপাশি কৌতুকপ্রিয়তার জন্যও সমাদৃত ছিলেন। পৌরাণিক নাটক মঞ্চস্থ ও অভিনয় করতে তিনি ভালোবাসতেন এবং বেছে নিতেন হনুমান, রাজা হরিশচন্দ্র, ধ্রুব, প্রহ্লাদ প্রভৃতি চরিত্র।
ঝিনাইদহ জেলায় পৈতৃক বাড়িতে যতীনের ছেলেবেলা কাটে । শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে সক্ষম হন বলে তার নাম রটে যায় বাঘা যতীন। এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করার পর তিনি সাঁটলিপি ও টাইপ শেখেন এবং পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের স্টেনোগ্রাফার নিযুক্ত হন। যতীন ছিলেন নির্ভীকচিত্ত এক যুবক। অচিরেই তিনি একজন আন্তরিক, সৎ, অনুগত এবং পরিশ্রমী কর্মচারী হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। তার মধ্যে আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ অত্যন্ত দৃঢ় ছিলো। অরবিন্দ ঘোষ এর সংস্পর্শে এসে যতীন শরীর গঠন আখড়ায় গাছে চড়া, সাঁতার কাটা ও বন্দুক ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুগান্তর দলে কাজ করার সময় নরেনের (মানবেন্দ্র নাথ রায়) সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং অচিরেই তারা একে অপরের আস্থাভাজন হন।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে যতীনসহ কয়েকজন বিপ্লবীকে আলীপুর ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করা হয়। এ মামলার বিচারে বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে যাবজ্জীবন নির্বাসন, অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল এবং অনুশীলন সমিতিকে বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে যতীন এবং নরেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারা উভয়েই হাওড়া-শিবপুর এলাকায় আত্মগোপন করেন এবং অন্যান্য বিপ্লবীর সঙ্গে গুপ্তভাবে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।
যতীনকে পুনরায় হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হয় এবং তার সঙ্গে অন্যান্য যারা গ্রেফতার হন তাদের ‘যতীন গ্যাং’ নামে অভিহিত করা হয়। অত্যাচারের শিকার হয়ে তাদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয় এবং অপর কয়েকজন পাগল হয়ে যান। সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে যতীন এ মামলা থেকে মুক্তি পেলেও তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় যতীন এবং নরেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর বাঘা যতীন পরলোকগমন করেন।