ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

এক বাড়িতে ৮০০ পরিবার

বিবিধ

আমাদের বার্তা, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

এক বাড়িতে ৮০০ পরিবার

একই বাড়িতে প্রায় ৮শ পরিবারে ১০ হাজার লোকের বসবাস। বসতঘর ১ হাজারেও বেশি। রূপকথার গল্পের মতো লোকজ ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকসংখ্যা, আয়তন নানা ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের বাড়িটি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেহারন দালাল বাড়ি।

এই বাড়িতেই একটি ওয়ার্ড, একজন ইউপি সদস্য। আর বাড়ির লোকজনের ভোটেই নির্বাচিত হন ইউপি সদস্য। ভোটার সংখ্যা ৩ হাজারের ওপরে। সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। বাড়িটি প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে অবস্থিত।

পুরো গ্রাম নিয়ে একটি বাড়ি। পেশায় বাড়ির বাসিন্দারা মৎস্যজীবী। বিয়ে-শাদি বেশির ভাগই হয় নিজেদের মধ্যে।

এ বাড়িতে রয়েছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রায় ১শ নলকূপ, ৮ মন্দির, কাপড়ের দোকান, স্বর্ণের দোকান, ২টি সেলুন, ফার্নিচারের দোকান, কয়েকটি মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান। এসব দোকানগুলো তাদের ঘরেরই একটি অংশ।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে বাড়িটি। ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য আধা পাকা একটি রাস্তা রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে ওয়ার্ড মেম্বার ভরদ দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়লা পানি অথবা আবর্জনা সরানোর জন্য নেই কোনো ড্রেনের ব্যবস্থা, বাড়ির ঘরগুলো গিজ গিজ করে আছে। উঠান বারান্দা কিংবা বাগানবাড়ি বলতে কিছু নেই। কোথাও এক ঘরের মূল দরজার সামনেই আরেক ঘরের বেড়া।

সব মিলিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, সূর্যের দিকে না তাকালে দিক নির্ণয় করা বড় মুশকিল। অধিকাংশ ঘর টিনের। রাস্তাগুলো সরু। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

বাড়ির সরু রাস্তাগুলো সরকারি অনুদানে পাকা করা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে নতুন কেউ ঢুকে আরেকজন পথ দেখিয়ে দেওয়া ছাড়া তিনি বের হতে অনেক কষ্ট হয়। বাড়ির দুদিকে বোয়ালজুড়ি খাল। বর্ষাকালে চারদিকে পানি। মাত্র একটি আধাপাকা ও মাটির রাস্তা।

ওই বাড়ির বাসিন্দা মাদব দাস জানান, অধিবাসীদের অধিকাংশরই পেশা মাছ ধরা। বাড়িতে একটি পরিবার শুধু শীল বংশের। বাকি সবাই দাস বংশের। বিয়ে-শাদি বেশির ভাগই হয় নিজেদের মধ্যে। স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের রয়েছে চরম অভাব। সেখানে রয়েছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৮শ শিশুর চারভাগের একভাগও স্কুলে যায় না।

ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য রয়েছে একটি মাত্র নিম্নমানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য কয়েক মাইল হেঁটে যেতে হয় নারায়ণপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে।

মেহেরন দালাল বাড়ির নামকরণ কীভাবে হয়েছে তা জানতে চাইলে জগন্নাথ মন্দিরের পূজারি বৃদ্ধ সচিন্দ্র চক্রবর্তী জানান, মেহেরন মূলত মহারণ ছিল। মহা অর্থ বড় আর রণ অর্থ যুদ্ধ। অর্থাৎ বড় যুদ্ধ। কোনো এক সময়ে এখানে জাগতিক বড় যুদ্ধ হয়। তখন এর নাম হয় মহারণ। পরে আস্তে আস্তে লোকজন মহারণকে মেহেরন নামে ডাকতে শুরু করে। এখানে জমিদাররা বসবাস করতো। এ এলাকায় কেউ জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটত না।

নামকরণ সম্পর্কে জমিদারদের বংশধর সমীর দাস বলেন, দেড়শ বছর আগে কালাচান দাস, গিরিশ চন্দ্র দাস ও তার আত্মীয়স্বজন পশ্চিম বঙ্গ থেকে এখানে আসেন। এখানে তারা দীর্ঘদিন ব্যবসা বাণিজ্য করেন। এখন তাদের কেউ নেই। কেউ ভারতে চলে গেছেন, আবার কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। এ বাড়িতে জেলেরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। জমিদারদের ব্রিটিশরা উপাধি দেয় দালাল বলে। এ জন্য এ বাড়ির নাম মেহরন দালাল বাড়ি। জমিদারদের দোতলা দুটি ভবন এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

একটি মন্দিরের কাজ চলমান, এতে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। এখন টাকার অভাবে কাজ হচ্ছে না। কাজটি সম্পন্ন করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন বাড়ির ইউপি সদস্য ভরদ দাস।
 

জনপ্রিয়