বিখ্যাত সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা নির্মল সেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দিঘিরপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সুরেন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত। মায়ের নাম লাবণ্য প্রভা সেন গুপ্ত। তার বাবা কোটালীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে গণিত শিক্ষক ছিলেন।
দেশ ভাগের পর নির্মল সেনের বাবা-মা তাদের অপর সন্তানদের নিয়ে কলকাতা চলে যান। জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি এদেশে থেকে যান। বড় হয়েছেন ঝালকাঠিতে তার ফুপুর বাড়িতে। তিনি কলসকাঠি বিএম একাডেমি থেকে ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও মাস্টার্স পাস করেন।
স্কুল জীবন থেকে নির্মল সেনের রাজনৈতিক জীবন শুরু ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের মাধ্যমে। কলেজ জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আরএসপিতে যোগ দেন। দীর্ঘদিন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে নির্মল সেনকে জীবনের অনেকটা সময় জেলে কাটাতে হয়েছে।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার মধ্য দিয়ে নির্মল সেন তার সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। এরপর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। লেখক হিসাবেও তার সুনাম রয়েছে। তার লেখা ‘পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ’, ‘বার্লিন থেকে মস্কো’, ‘মা জন্মভূমি’, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’, ‘আমার জীবনে ’৭১ এর যুদ্ধ’, ‘আমার জবানবন্দি’ উল্লেখযোগ্য।
নির্মল সেন ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন এবং চিকিৎসা পরবর্তী সময় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার দীঘিরগ্রামে নিজ বাড়িতেই থাকতেন। এখানেই তিনি ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৪ ডিসেম্বর তাকে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার ফুসফুসে যে ইনফেকশন ছিলো, তা রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় (সেপটিসেমিয়া) তাকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হচ্ছিলো। এই অবস্থায় তিনি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।