আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান সমৃদ্ধ হয়েছে যার চিন্তা আর গবেষণার কারণে সেই জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের আজ জন্মদিন। তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে জন্ম গ্রহণ করেন ।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২১ বছর বয়সে মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি এক প্রকার পঙ্গু জীবন যাপন করতেন। রোগাক্রান্ত হয়ে দেহ পঙ্গু থাকলেও সজাগ মস্তিস্কে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের চিন্তা তার মাথায় সর্বদা কাজ করতো।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও থেমে থাকেনি হকিংয়ের আবিষ্কার। মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ‘বিগ ব্যাং থিউরি’ দিয়ে তিনি হইচই ফেলে দেন। শুধু তাই নয়, হকিং কখন কী বলবেন তা শোনার জন্য আগ্রহে থাকেন গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। হকিংয়ের বাবা ড. ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক। আর মা ইসাবেল হকিং ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে চিকিৎসক হোক। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই হকিংয়ের আগ্রহ বিজ্ঞান পাঠে। যদিও গণিত নিয়ে পড়াশুনা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে গণিত পড়ানো হতো না বলে ভর্তি হয়ে যান পদার্থবিজ্ঞানে। পরে তাপ গতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবং কোয়ন্টাম বলবিদ্যায় তার আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় বেশি।
স্টিফেন হকিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের ‘লুকাসিয়ান প্রফেসর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পদগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় ‘লুকাসিয়ান প্রফেসর’কে। আরেক জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনও এই পদে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন৷
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত হয়ে ওঠেন হকিং। বইটিতে তিনি মহাবিশ্বের আগমনের রহস্য নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব দেন। সেখানেই তিনি বিখ্যাত ‘বিগ ব্যাং তত্ত্ব’টি আলোচনা করেছিলেন। আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলার হিসেবে বইটির প্রায় ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।
সে সময় জার্মান ম্যাগাজিন স্পিগেলকে হকিং বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় শুধু আমি বা আমার মতো তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরাই নন, আমরা সবাই জানতে চাই আমরা কোথা থেকে এসেছি৷’
বিগ ব্যাং থিউরিতে তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের ভূমিকা থাকার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন না।
ব্রিফ হিস্ট্রি বইয়ে হকিং বলছেন, অভিকর্ষ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং তা অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি’ হওয়ার কারণেই আমরা মহাশূন্যে অনেক কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি। ’
নিজের সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো, ‘আমি ৪৯ বছর আগে থেকেই অকালমৃত। তাই আমি এখন আর মরতে ভয় পাই না। আমি যা করতে চেয়েছিলাম তার অনেক কিছুই করতে সক্ষম হয়েছি’।
মহাবিশ্ব নিয়ে তার সর্বশেষ গ্রন্থ ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’। আইনস্টাইনের পর তাকে বিখ্যাত পদার্থবিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদকসহ এক ডজনেরও বেশি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এছাড়া নানাভাবে সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বীয় কসমোলজি কেন্দ্রে হকিংয়ের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার আরেকটি আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে, আফ্রিকান ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্যাল সায়েন্সের সামনে।
এছাড়া মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর তাদের রাজধানী সান সালভাদরে বিজ্ঞান জাদুঘরটির নামকরণ করেছে হকিং এর নামে। হকিং রয়েল সোসাইটির ফেলো এবং ইউএস ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেরও সদস্য ছিলেন।
স্টিফেন হকিং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মার্চ কেমব্রিজে তার বাড়িতে মারা যান। তার মৃত্যুতে গনভিল অ্যান্ড কাইয়ুস কলেজের পতাকা অর্ধ-নমিত রাখা হয় এবং সেখানকার শিক্ষার্থী ও অতিথিরা শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন।