সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী শনিবার। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীর এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অকাল প্রয়াণ হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাকে ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে সংবিধান বিষয় পড়াতেন। স্কুলজীবনে বরিশাল ও খুলনার পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। পরবর্তীতে আইন-আদালত ও কূটনীতির জটিল-কঠিন বিষয়গুলো তিনি সহজ করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করেছেন। যেগুলো দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, দৈনিক খবর, দি নিউ নেশন, মানবজমিন, প্রথম আলো ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি দৈনিক বাংলাবাজার ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের প্রতিবেদক, কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের প্রবাসী আনন্দবাজারের ঢাকা প্রতিনিধি ও লন্ডনের ইস্টার্ন আই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম বই ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার এই বইকে ডিজিটাইজড ভার্সন করে তাদের লাইব্রেরিতে সংযোজন করে ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ওপর রেফারেন্স বইয়ের মর্যাদা দেয়।
মিজানুর রহমান খানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ; মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড; মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম; মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকাণ্ড, জেনারেল জ্যাকবের মুখোমুখি ইত্যাদি।
বিভিন্ন জার্নালে পঞ্চাশটির বেশি প্রকাশিত প্রবন্ধ আছে তার।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ক্যু’র সঙ্গে সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে গবেষণা খুব কম হয়েছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিদেশী সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজের। মিজানুর রহমান খান হলেন প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক যিনি এ বিষয়ে সবচেয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছেন।
প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের আইন পেশায় পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার আইনি চিন্তা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নেপথ্য ইতিহাস ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির নানা অজানা তথ্যের সংগ্রহে একটি সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয় কয়েকবছর আগে। মিজানুর রহমান খান ছিলেন সেই গ্রন্থের সম্পাদক।
মিজানুর রহমান খানের কনিষ্ঠ সহোদর শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল দৈনিক শিক্ষাডটকম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘মিজানুর রহমান খান ফাউন্ডেশন’ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী শনিবার রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তার রাজ্জাক প্লাজায় দৈনিক আমাদের বার্তার অডিটোরিয়ামে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আজ ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার স্টেশন রোডে প্রয়াতের বাড়িতে কুরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।