বিখ্যাত সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের আজ জন্মদিন। তিনি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ভারতের বিহারের ভাগলপুরে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার পিত্রালয় ছিলো মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে, তবে কলকাতা শহরে তার স্কুল ও কলেজ জীবন কাটে। তিনি কলকাতা শহরের যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় তার বিয়ে হয়। বিভিন্ন স্থানে চাকরি করার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। লেখিকা হিসেবে সম্পূ্র্ণ রূপে সময় দেয়ার জন্য তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন।
তিনি বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষের দিকে ছোট গল্প ও আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন। সমকালীন সামাজিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তার কাহিনীগুলো রচিত হয়। শহুরে মধ্যবিত্তদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন, বর্তমান যুগের পরিবর্তনশীল নীতিবোধ, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে নৈতিক অবক্ষয়, নারীদের দুঃখ-যন্ত্রণা তার রচনাগুলোর মূল উপজীব্য ছিলো।
তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘মিতিন মাসি’ নামক মহিলা গোয়েন্দা চরিত্রের স্রষ্টা, এবং এই সিরিজে তিনি অনেকগুলো কিশোর উপন্যাস রচনা করেন। প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে তিনি বহু ছোট গল্প ছাড়াও চব্বিশটি উপন্যাস রচনা করেছেন। ‘দহন’ নামক তার একটি বিখ্যাত উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋতুপর্ণ ঘোষ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো- কাছের মানুষ, দহন, কাচের দেওয়াল, হেমন্তের পাখি, নীল ঘূর্ণি, অলীক সুখ, গভীর অসুখ, উড়ো মেঘ, ছেঁড়া তার, আলোছায়া, অন্য বসন্ত, পরবাস, পালাবার পথ নেই, আমি রাইকিশোরী, রঙিন পৃথিবী, জলছবি,
যখন যুদ্ধ, ভাঙ্গন কাল, আয়নামহল, মারণ বাতাস। তিনি নঞ্জাগুডু থিরুমালাম্বা জাতীয় পুরস্কার, ব্যাঙ্গালোর কথা পুরস্কার, ত্রিবৃত্ত পুরস্কার, সাহিত্যসেতু পুরস্কার, তারাশংকর পুরস্কার, দ্বিজেন্দ্রলাল পুরস্কার, শরৎ পুরস্কার, ভুবনমোহিনী মেডেল, ভারত নির্মাণ পুরস্কার, সাহিত্য সেতু পুরস্কার, শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জীবনাবসান হয়।