ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৭ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের স্মরণসভা আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ০৮:৩৯, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের স্মরণসভা আজ

সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও জ্ঞানতাপস সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে নয়টায় রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তার রাজ্জাক প্লাজায় দৈনিক আমাদের বার্তার অডিটোরিয়ামে স্মরণসভা আয়োজন করা হয়েছে। তার আগে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এছাড়া ‘মিজানুর রহমান খান ফাউন্ডেশন’ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার স্টেশন রোডে প্রয়াতের বাড়িতে কুরআনখানি ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীর এক বেসরকারি হাসপাতালে মিজানুর রহমান খানের অকাল প্রয়াণ হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর। তাকে ঢাকার মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে সংবিধান বিষয় পড়াতেন। স্কুলজীবনে বরিশাল ও খুলনার পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। পরবর্তীতে আইন-আদালত ও কূটনীতির জটিল-কঠিন বিষয়গুলো তিনি সহজ করে পাঠকের কাছে উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করেছেন। যেগুলো দৈনিক যুগান্তর, সমকাল, দৈনিক খবর, দি নিউ নেশন, মানবজমিন, প্রথম আলো ইত্যাদি পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি দৈনিক বাংলাবাজার ও দৈনিক মুক্তকণ্ঠের প্রতিবেদক, কূটনৈতিক প্রতিবেদক ও বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের আনন্দবাজার গ্রুপের প্রবাসী আনন্দবাজারের ঢাকা প্রতিনিধি ও লন্ডনের ইস্টার্ন আই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম বই ‘সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিতর্ক’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বইটি পাঠ্য তালিকায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার এই বইকে ডিজিটাইজড ভার্সন করে তাদের লাইব্রেরিতে সংযোজন করে ও বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইনের ওপর রেফারেন্স বইয়ের মর্যাদা দেয়।

মিজানুর রহমান খানের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা: এক অশনি সংকেত; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের স্বরূপ; মার্কিন দলিলে মুজিব হত্যাকাণ্ড; মার্কিন দলিলে জিয়া ও মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড এরশাদের পতন এবং বিএনপির জন্ম; মার্কিন দলিলে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যাকাণ্ড, জেনারেল জ্যাকবের মুখোমুখি ইত্যাদি।

বিভিন্ন জার্নালে পঞ্চাশটির বেশি প্রকাশিত প্রবন্ধ আছে তার।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ক্যু’র সঙ্গে সিআইএর সম্পৃক্ততার বিষয়ে গবেষণা খুব কম হয়েছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিদেশী সাংবাদিক লরেন্স লিফসুলজের। মিজানুর রহমান খান হলেন প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি গবেষক যিনি এ বিষয়ে সবচেয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছেন।

প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের আইন পেশায় পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার আইনি চিন্তা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের নেপথ্য ইতিহাস ও বাহাত্তরের সংবিধান তৈরির নানা অজানা তথ্যের সংগ্রহে একটি সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয় কয়েকবছর আগে। মিজানুর রহমান খান ছিলেন সেই গ্রন্থের সম্পাদক।

১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীলঙ্কায় আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে পাকিস্তান ও ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কৌশলগত গুরুত্ব ও ফলাফল বিষয়ে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন (প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যৌথভাবে)। এই প্রবন্ধ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল সোশ্যাল সাইন্স রিভিউতে প্রকাশিত হয় (ডিসেম্বর ২০০১, খণ্ড ১৮, সংখ্যা-২, পৃ.৩-১৬)

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত ভ্রমণ করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ার এথনিক মাইনরিটি বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত ইংরেজি থেকে বাংলায় আইন অনুবাদের একটি প্রকল্পে তিনি কাজ করেছেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ড. মরিস ডি. জিগারের অধীনে।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে পাকিস্তান ভ্রমণ করেন মিজানুর রহমান খান। বাংলাদেশ পাকিস্তান সম্পর্ক ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থাপনের কৌশলগত পন্থা ইত্যাদি বিষয়ক সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব স্টেটের আমন্ত্রণে আমেরিকা ভ্রমণ করেন মিজানুর রহমান খান। এবছরই ব্রিটিশ ফরেন অফিস আয়োজিত একটি ওয়ার্কশপে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি হাউজ অব কমন্সের কার্যপ্রণালী দেখে অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন।

বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ভবিষ্যৎ ও পারমাণবিক অস্ত্রনীতি বিষয়ক আলোচনার অংশগ্রহণ করেন ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে।

২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ার সরকারের যৌথভাবে আয়োজিত ও বালিতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ইন্টার-মিডিয়া ডায়ালগ কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রুহুল আমীনকে তিনি একটি অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত শুরুর অনুরোধ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট তার অনুরোধে সেই তদন্ত সম্পন্ন করে এবং তদন্তের ফলাফল লিখিতভাবে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর (স্মারক নং ১৯২৬) তাকে অবহিত করা হয়।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে তিনি একটি সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। সেই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে বাংলাদেশ আইন সমিতি কর্তৃক একটি জাতীয় পর্যায়ের সেমিনার আয়োজন করা হয়। সেই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ বা কি-নোট পেপার পাঠ করেছিলেন তিনি। এই আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক, সিনিয়র আইনজীবী ও অন্যতম সংবিধান-প্রণেতা ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম প্রমুখ।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেলে আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় তিনি মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। বিষয় ছিল সাংবিধানিক সংস্কার, গণতন্ত্র ও সুশাসন। এই আলোচনায় অন্যতম আলোচক ছিলেন সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম এবং আইন, বিচার ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত একটি সেমিনারে তিনি ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাত বছর’- শিরোনামে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে চীন ভ্রমণ করেন মিজানুর রহমান খান।

মিজানুর রহমান খানের জন্ম ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। তার বাবা আলী আকবর খান ও নাছিমা খানম আঙুরার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বড় সন্তান শাদমান মিজানুর খান ও কনিষ্ঠ পুত্র আনান মিজানুর খান। একমাত্র কন্যা আফছারা মিজানুর খান। তার ছোট ভাই বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার প্রধান সম্পাদক এবং শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর প্রকাশক ও সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট দৈনিক সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি মসিউর রহমান খান।

ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় মিজানুর রহমান খানের প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন পর্ব। তারপর সরকারি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। বিএম কলেজ থেকেই হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় লেখালেখি শুরু হয় স্থানীয় পত্রিকায়। এসএসসি পাসের পর শুরু করেন খুলনা ও ঢাকার পত্রিকায় লেখালেখি। উচ্চ মাধ্যমিক ও অনার্স পড়ার পুরো সময়টাই কাটে তার বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার মধ্য দিয়ে।

 

জনপ্রিয়