সাবেক প্রধান বিচারপতি ও মুক্তচিন্তার লেখক বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন একাধারে স্বনামধন্য লেখক, বিশ্লেষক ও কবি। বাংলায় কোষগ্রন্থ রচনায় তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। পেশাগত জীবনে অসামান্য সাফল্য, স্বল্প সময় দেশ পরিচালনাকালে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে তিনি জাতির শ্রদ্ধার আসনে স্থান পান। তার সততা, নিষ্ঠা ও দৃঢ় ব্যক্তিত্ব সব দল-মতের ঊর্ধ্বে জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে।
হাবিবুর রহমান ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস মুর্শিদাবাদ ছেড়ে রাজশাহীতে চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাইকোর্ট বারে যোগ দেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ১৯৯৫ পর্যন্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০-৯১ মেয়াদে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই বছরে তিনি অবসরে যান। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। সে সময় সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হলে তিনি তা অসামান্য দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
বিচারপতি হাবিবুর রহমান ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক এবং আরো বহু সংস্থার পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ফেলো, বাংলা একাডেমির ফেলো, লিংকন্স ইন-এর অনরারি বেঞ্চার, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উরস্টার কলেজের অনরারি ফেলো। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি ৮৫ বছর বয়সে মারা যান।