বিশিষ্ট সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ও ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ অভিধান প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন বৃটিশ ভারতের বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার রামনারায়ণপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নিবারণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মায়ের নাম জগৎতারিণী দেবী।
পৈতৃক বাড়ি যশাইকাটি গ্রামে। এই গ্রামেই তার বিদ্যারম্ভ। এখানকার বিভিন্ন স্কুলের পাঠ শেষে ভর্তি হন কলকাতার মেট্রোপলিটন কলেজে বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজে। কিন্তু বিএ তৃতীয় বর্ষে স্টুডেন্ট ফান্ডের টাকা বন্ধ হওয়ায় আর পড়াশোনা করতে পারেন নি। ইতিমধ্যে তার পিতৃবিয়োগ হয়।
অগত্যা কিছুকাল গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করার পর কলকাতায় মেদিনীপুরের নাড়াজোলের কুমার দেবেন্দ্রলাল খানের গৃহশিক্ষকতা করেন। পরে ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা টাউন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে প্রধান পণ্ডিত রূপে যোগদান করেন।
কিন্তু সেখানে মাসিক মাহিনা যথেষ্ট ছিলো না। বাধ্য হয়ে বছর খানেক বাদে ছেড়ে দেন শিক্ষকতা। পরে তার এক অগ্রজের চেষ্টায় সুপারিনটেন্ডন্টের কাজ পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত পতিসর কাছারিতে। ইতোমধ্যে কোনো একসময় রবীন্দ্রনাথ জমিদারি পরিদর্শনে এসে তার সংস্কৃত জ্ঞানের পরিচয় পান এবং ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন।
সেসময় থেকেই তিনি ব্রহ্মচর্যাশ্রমে সংস্কৃতের অধ্যাপকরূপে অতিবাহিত করে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে অবসর নেন। অধ্যাপনাকালে কবির অভিপ্রায় অনুসারে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ সংকলনের কাজ শুরু করেন। তার সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় দুরূহ কাজ সম্পন্ন করলেন চল্লিশ বছর পর ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে।
এই বৎসর বিশ্বভারতী পাঁচটি খণ্ডে প্রকাশ করে তার সংকলিত ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। তবে বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রকাশের পূর্বে তিনি নিজের অর্থব্যয়ে ১৩৪০ বঙ্গাব্দ (১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে এই অভিধানের ধারাবাহিক প্রকাশ আরম্ভ করেন কলকাতার ‘বিশ্বকোষ’ প্রেস হতে। ১৩৫৩ বঙ্গাব্দে ১০৫ খণ্ডে এই মুদ্রণ সমাপ্ত হয়। এর কিছুদিন পর ১০৫ খণ্ডের এই অভিধান পাঁচ ভাগে ক্রমে ক্রমে প্রচারিত হয়।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উল্লেখযোগ্য ছাত্রপাঠ্য গ্রন্থগুলো হলো- ‘সংস্কৃত প্রবেশ’, ‘পালিত প্রবেশ’,‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় অসামান্য কাজের স্বরূপ স্বীকৃতিও তিনি পেয়েছেন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক ও ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে শিশিরকুমার স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট এবং সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দেশিকোত্তম উপাধি দ্বারা সম্মানিত করে। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত হন ।