স্বনামধন্য সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর জন্মদিন আজ। তিনি সারা জীবন ধরে দলিত ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। লোধা, শবরদের জন্য কলম ধরেছেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনেও ছিলো তার অসামান্য অবদান।
মহাশ্বেতা দেবী বলতেন, ‘আঙুল লেখে না, লেখে আমার মন।’ ছোটবেলায় শান্তিনিকেতন আশ্রমে দেখা হয়েছিলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। তখনকার আশ্রম-জীবন তাকে দিয়েছিলো অদম্য মুক্তির আনন্দ, পরকে আপন করার নিঃস্বার্থ টান।
মহাশ্বেতা দেবী ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মণীষ ঘটক ছিলেন কল্লোল সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কবি ও ঔপন্যাসিক। আর কাকা বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবীর মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী।
মহাশ্বেতা দেবীর বিদ্যালয়-শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরেই। ইডেন স্কুলের মন্টেসরিতে পড়াশোনা শুরু করেন। ভারত ভাগের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পড়াশোনা করতে শান্তিনিকেতন যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন। এ সময় মাত্র দুবছর শান্তিনিকেতনে কাটালেও তা ছিলো তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়। এ সময়ই তার লেখালেখির শুরু। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় খগেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘রংমশাল’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় তার রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত রচনা ‘ছেলেবেলা’।
মহাশ্বেতা দেবী ১০০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০টিরও বেশি ছোটোগল্প রচনা করেছেন। তবে তার রচনার মধ্যে অনেকগুলো অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘অরণ্যের অধিকার’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান মহাশ্বেতা। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ও র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, সার্ক সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন তিনি।
মহাশ্বেতা দেবী পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই (এম))-নেতৃত্বাধীন সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশেষত, তিনি কৃষকদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে উর্বর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে তা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে শিল্পপতিদের দিয়ে দেয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহাশ্বেতা দেবী পরলোকগমন করেন।