চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিনের আজ জন্মদিন। আশির দশকে বাংলাদেশে তিনি মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ চারণ সাংবাদিক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। দৈনিক সংবাদে পথ থেকে পথে শীর্ষক ধারাবাহিক রিপোর্টের জন্য তিনি খ্যাতি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
মোনাজাতউদ্দিন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলীম উদ্দীন, মায়ের নাম মতিজান নেছা।
রংপুরের কৈলাশরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রাজশাহী বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাস করেন। এরপর কারমাইকেল কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় মনোযোগী হন। ছড়া-কবিতা-গল্প রচনা এবং সাময়িক পত্রিকার প্রচ্ছদ অঙ্কনে সুনাম অর্জন করেন। বিএ ক্লাসে পড়ার সময় পিতার মুত্যুতে পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে এবং তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়। ফলে তার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে এবং পরে প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে বিএ পাস করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর নিজের প্রকাশনায় ‘দৈনিক রংপুর’ প্রকাশিত হয়। তিনি রংপুর কেরানিপাড়ার বাসা থেকে নানা অভাব অনটনের মধ্য দিয়েও সাংবাদিকতা চালিয়ে যান। এ ছাড়া পূর্বদেশ, সংবাদ ২০ বছর কাজ করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংবাদ ছেড়ে জনকন্ঠ পত্রিকায় যোগদান করেন।
তার উল্লেখযোগ্য লেখাগুলো হলো-সংবাদের নেপথ্য, পথ থেকে পথে, কানসোনার মুখ, নিজস্ব রিপোর্ট, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং কাগজে মানুষেরা।
সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন নাসিমা আক্তার ইতির সঙ্গে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ১৪ ডিসেম্বর বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় কন্যা মাহফুজা মাহমুদ চৈতি ও ফেরদৌস সিঁথি পেশায় চিকিৎসক। তার ছেলে আবু ওবায়েদ জাফর সাদিক সুবর্ণ বুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আত্মহত্যা করে।
মোনাজাত উদ্দীন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে আকস্মিকভাবে পানিতে পড়ে যান এবং পানিতে ডুবে মারা যান।