মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাবের ওপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেছেন পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাসিত শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী চৌধুরী নওফেল। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অন্যান্য সংঘাতের ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। বাংলাদেশ যেন সারা বিশ্ব থেকে ইসলামিক চরমপন্থীদের জন্য নতুন আবাসে পরিণত না হয়। এছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে নওফেল বলেছেন, ড. ইউনূস শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবং সংখ্যালঘু, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ জনগোষ্ঠীকে চরমপন্থী, অতি-ইসলামবাদী ও সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। উদার পশ্চিমাদের চোখে তার কোনো বৈধতা থাকা উচিত নয়।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নওফেল এসব কথা বলেন। তার সাক্ষাৎকারটি শনিবার দ্য হিন্দুর অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
শেখ হাসিনার টানা সরকার পরিচালনার তৃতীয় মেয়াদে ২০১৮ থেকে ২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন নওফেল। বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ দফায় সরকার গঠন করলে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে তাকে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশে যখন জুলাই অভ্যুত্থান দানা বাঁধছিলো তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নওফেলেরও কোনা খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে দ্য হিন্দু তাকে সামনে আনলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে নওফেল আরো বলেন, বাংলাদেশকে সিরিয়া ও ইরাকের মতো ইসলামী উগ্রপন্থীদের নতুন আবাসস্থলে পরিণত করা উচিত নয়, কারণ গত কয়েক দশক ধরে ওইসব স্থান জঙ্গিবাদের ঘাঁটি হিসেবে কাজ করেছে।
এছাড়াও হিজবুত তাহরির ও জামায়াতে ইসলামীকে উগ্রপন্থী দল আখ্যা দিয়ে গত কয়েক মাস ধরে এসব গোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দেন তিনি। হিজবুত তাহরির গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের গোষ্ঠীগুলিকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখা উচিত নয়। তারা কেবল অঞ্চল নয়, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম।
গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিল্পে অস্থিরতা বেড়েছে অভিযোগ করে নওফেল বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন আনার কোনো ম্যান্ডেট নেই। বাংলাদেশের আদর্শিক গতিপথ নির্ধারণেরও ম্যান্ডেট নেই। ড. ইউনূস আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেননি। তাই তিনি বাংলাদেশের আদর্শিক ভিত্তি- ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ঘৃণা করেন।
দ্য হিন্দুকে নওফেল আরও বলেন, এর আগে ড. ইউনুস হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এবং ট্রাম্পের জয়কে ‘গ্রহণ বা গ্রাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাতে ট্রাম্পের প্রতি তার মনোভাব পরিষ্কার। আমি নিশ্চিত যে ২০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প অফিসে শপথ নেওয়ার পরে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য কিছু প্রতিক্রিয়া হবে।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সারা দেশে সেনাবাহিনীর লকডাউন দিতে চেয়েছিলেন বলেও দাবি করা হয়েছে দ্য হিন্দুর ওই সাক্ষাৎকারে। সে প্রসঙ্গে নওফেল বলেন, আমরা আইনশঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছিলাম। সে কারণেই সেনাবাহিনীর লকডাউনের চিন্তাটা আসে।