গাজীপুর মহানগরীর সারাব এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও কারখানায় আগুনের ঘটনার জেরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, গ্রামীণ ফেব্রিকসসহ আশপাশের এলাকায় যৌথ বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই এলাকায় আন্দোলনকারী শ্রমিকদের দেখা যায়নি। এ ছাড়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ‘গ্রামীণ ফেব্রিকস’ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। মহানগরের জিরানি বাজার, চক্রবর্তী ও সারাব এলাকার গ্রামীণ ফেব্রিকস কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও থানা-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
এর আগে গতকাল বুধবার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ হওয়া ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে কর্মহীন শ্রমিকেরা চন্দ্রা–নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। পরে তাঁরা অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। একপর্যায়ে একটি মালবাহী ট্রাক ও তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
গ্রামীণ ফেব্রিকস কারখানার নিরাপত্তাকর্মী মো. ওবায়দুল বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা কারখানার প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ কারণে কারখানা আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে গতকালের ঘটনাকে অন্য কোনো পক্ষের উসকানি বলে দাবি করেছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিক ও টিম লিডাররা। চক্রবর্তী এলাকায় আবদুল হামিদ নামের প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী বলেন, অনেক দিন ধরেই কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও কর্মসূচির পালন করা হচ্ছিল। এর মধ্যে অন্য কোনো পক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে প্রবেশ করে পরিস্থিতি খারাপ করে দিয়েছে।
বেক্সিমকো কারখানার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের লিডার মো সুমন মিয়া বলেন, ‘গত মঙ্গলবার আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। সেখানে ঢাকা থেকে শ্রমিকনেতা মিশু আপা আসেন এবং তিনি ঘোষণা দেন, ২২ তারিখ একটি সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কিন্তু তিনি কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। এর কারণে গতকাল আবার সেখানে শ্রমিকেরা যাঁর যাঁর মতো করে সমাবেশে যোগ দেন এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বহিরাগত কোনো পক্ষের উসকানিতে সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমরাও তাদের রোষানল থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফিরেছি।’
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর নগরের সারাব এলাকার ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের’ বন্ধ হওয়া ১৬ কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। বেলা দুইটার দিকে শ্রীপুর এলাকায় সানসিটির মাঠে সমবেত হন প্রতিষ্ঠানটির কয়েক হাজার শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা। সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা হয়। তবে বিকেলে আবার শ্রমিকেরা সানসিটি মাঠে সমাবেশ শুরু করেন। এ সময় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, কাঠের লাকড়ি রাস্তায় ফেলে আগুন দেওয়া হয়। উত্তেজিত শ্রমিকেরা সড়কের চলাচলরত অর্ধশতাধিক যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়। একপর্যায়ে একটি মালভর্তি ট্রাকে ও তিনটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন তাঁরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে গ্রামীণ ফেব্রিকস নামের একটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।
আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত বেক্সিমকোসহ আশপাশের এলাকা পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবু তালেব। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে যৌথ বাহিনী, শিল্প পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।