টঙ্গীর তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৮ তম বিশ্ব ইজতেমার ‘প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ’ শেষ হয়েছে। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে এ মোনাজাত শেষ হয় ৯টা ৩৬ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেছেন মাওলানা জুবায়ের আহমেদ।
মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে অশ্রুভেজা চোখে ক্ষমা প্রার্থনা ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করা হয়।
এদিন যত দূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্তই শুধু মুসল্লিদের ঢল দেখা গেছে। লাখো মুসল্লির কাতারে শরিক হয়ে পরম করুণাময়ের দরবারে হাত পেতেছেন খোদাপ্রেমী এসব মানুষ।
মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লির ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন আখরি মোনাজাতে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, মহানবী হযরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাতে ইজতেমার কামিয়াবি, অংশগ্রহণকারীসহ সব মুসলমানদের গুনাহ মাফ, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, বিশ্ব শান্তি, বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
গত তিন দিন কুয়াশা-শীত উপেক্ষা করে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। শিল্প নগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্থান না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন বসে পড়েন রাস্তায়, খোলা মাঠে বা বাসার ছাদে কিংবা যানবাহনেই। তবুও তাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আখেরি মোনাজাতে যেকোনোভাবে অংশ নিতে পেরেই তারা খুশি। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় এসেছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। শুরায়ে নিজামের প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিন দিনের এ ইজতেমায় লাখো মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশগ্রহণ করেছে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা।
এরপর আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা। ৮ দিন বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করবেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ব ইজতেমা।
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম আয়োজন হয়েছিল ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে কাকরাইল মসজিদে। দিন দিন লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্প, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পর ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে নিয়মিত আয়োজন হয় বিশ্ব ইজতেমার। বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতকে কেন্দ্র প্রতি বছর ইজতেমার শেষ দিনে তাবলিগের সাথী ছাড়াও সাধারণ মুসলমানরা ভীড় জমান তুরাগ তীরে। কানায় কানায় ভরে উঠে পুরো টঙ্গী এলাকা। অনেকে আগের রাত থেকেই ময়দানের আশপাশে অবস্থান নেন।