
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সার্জেন্ট জহুরুল হক এর আজ জন্মদিন। জহুরুল হক ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে নোয়াখালী জেলার সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ওই বছরই পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। কালক্রমে তিনি 'সার্জেন্ট' পদে উন্নীত হন।
১৯৬৭খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন সার্জেন্ট জহুরুল হক।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটির সরকারি নাম রেখেছিলো 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচারা। এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামি করা
হয়। তারমধ্যে ১ নম্বর আসামি হিসেবে শেখ
মুজিবুর রহমানকে রাখা হয়।
জহুরুল হককে ১৭ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ক্যান্টমেন্টে সৈনিকদের খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য বাঙালি শিশুরা ভিড় করে।
এতে অবাঙালি সৈনিকরা কয়েকজন অভুক্ত শিশুকে ধরে এনে বন্দিশিবিরের সামনে অমানবিকভাবে প্রহার শুরু করে। কয়েকজন বন্দি এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার মনজুর শাহর সঙ্গে জহুরুল হক তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা জহুরুল হক ঘর থেকে বের হলে মনজুর শাহ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলি তার পেটে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় এবং শেখ মুজিবসহ সব বন্দিরা নিঃশর্ত মুক্তি পায়। বাংলাদেশের মানুষ দেশমাতৃকার মুক্তিপ্রয়াসী এই বীর যুবককে সেদিন কেবল শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেননি, দেশে স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার নামে শপথ গ্রহণ করেছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ সেদিন ইকবাল হলের নাম পরিবর্তন করে সার্জেন্ট
জহুরুল হক হল নামকরণ করে।
স্বাধীনতার পরে বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম বেজও সার্জেন্ট জহুরুল হক নামাঙ্কিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) পান।