
এবারের বইমেলায় কোনো স্টলে নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক জাফর ইকবালের বই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নির্দেশদাতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মদদদাতা ড. জাফর ইকবালের বই এবারের বইমেলায় বর্জন করেছেন স্টল মালিকরা।
সরেজমিনে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। তাই প্রকাশক ও পাঠকরা বলছেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় যদি ফ্যাসিস্টদের বর্জন না করা হয় তবে সংগ্রামে শহীদ ও আহতদের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।
তারা আরো বলেন, শেখ হাসিনা ও ড. জাফর ইকবালের যেকোনো কার্যক্রমে সায় দেয়া মানে স্বৈরশাসনসহ সব অন্যায়কে সমর্থন দেয়া। ফলে ছাত্র-জনতার রক্তে স্বাধীন দেশে এমনটা অসম্ভব। যার কারণে মেলায় তাদের বর্জন করা হয়েছে।
মেলা শুরুর আগেই স্বৈরাচারদের কোনো বই বিক্রি করা হবে না বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে একজন প্রকাশক জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে মেলা আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি কিংবা পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতি এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তারপরও প্রকাশকরা ব্যক্তিগতভাবে এই বই বিক্রির বিপক্ষে ছিলেন। এর মধ্যেও তাম্রলিপি প্রকাশনী জাফর ইকবালের বই তাদের স্টলে বিক্রির জন্য প্রদর্শন করে। কিন্তু মেলায় আগত ক্রেতাদের তোপের মুখে তারা বইটি স্টল থেকে প্রত্যাহার করে।
এ বিষয়ে আরো কয়েকজন প্রকাশক তাদের বই বর্জনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, যে বিল্পবের মধ্যে দেশ স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে সেই বিপ্লব ধরে রাখতে হলে ফ্যাসিবাদকে না বলতে হবে। তাই ঘৃণা থেকেই শেখ হাসিনা ও ড. জাফর ইকবালের বই বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লেখক জাফর ইকবালকে স্বৈরাচারের দোসর অ্যাখ্যা দিয়েছেন মেলায় আগত ক্রেতারা। তাদের ভাষ্য তিনি দেশের ছাত্র-জনতার ভয়ানক শত্রু। এমন একজনের বই এবারের মেলায় স্থান পেলে তা ভাষার চেতনার সঙ্গে বেঈমানি হবে। অন্য দিকে ছাত্র-জনতার রক্তে যে হাসিনার হাত রঙিন তার বইও মেলায় আসলে আন্দোলনে শহীদ ও আহত এবং দেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা হবে। তাই ধিক্কার স্বরূপ এদের বই বর্জন করেছেন সর্বসাধারণ।
এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৩৫।
এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান। মোট ৩৭টি প্যাভিলিয়নের ৩৬টিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে ১টি। মাসব্যাপী এ মেলা প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।