ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ , ১০ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্মদিন আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্মদিন আজ

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি ‘গুপ্ত কবি’নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মার্চ উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী (বর্তমানে কাঁচড়াপাড়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

মাত্র ১০ বছর বয়সে মাকে হারান। এরপর কলকাতায় আশ্রয় নেন জোড়াসাঁকোয় মামারবাড়িতে। তার বাবা হরিনারায়ণ গুপ্ত প্রথমদিকে কবিরাজি চিকিৎসা করতেন, পরে শেয়ালডাঙ্গার কুঠিবাড়িতে চাকরি করেন।

শৈশবে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হওয়ার কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি, তবে অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র নিজ চেষ্টায় বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা শেখেন এবং বেদান্তদর্শনে পারদর্শিতা লাভ করেন। সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশের প্রেরণায় এবং বন্ধু যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের আনুকূল্যে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি তিনি সাপ্তাহিক সংবাদ প্রভাকর প্রকাশ করেন।

অর্থসংকটের কারণে মাঝে চার বছর বন্ধ থাকার পর ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ আগস্ট সপ্তাহে তিন সংখ্যা হিসেবে পত্রিকাটি আবার প্রকাশিত হতে থাকে। তার সুযোগ্য সম্পাদনায় পত্রিকার জনপ্রিয়তা বাড়লে ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন থেকে এটি দৈনিক পত্রে রূপান্তরিত হয়।

আধুনিক বাংলার সমাজ গঠনে সংবাদ প্রভাকরের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরচন্দ্র প্রথমে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিরুদ্ধে রক্ষণশীলদের পক্ষভুক্ত ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষাপদ্ধতিরও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু নবপর্যায়ে সংবাদ প্রভাকর সম্পাদনার সময় থেকে তার মনোভাবের পরিবর্তন হতে থাকে। তিনি দেশের প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন।

হিন্দু থিয়ফিলানথ্রফিক সভা এবং তত্ত্ববোধিনী সভায় তিনি বক্তৃতাও করতেন। প্রথম দিকে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা করে এ বিষয়ে নানা ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করলেও পরে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থন, ধর্মসভার বিরোধিতা, দেশের বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং দরিদ্র জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে উদার মনোভাবের পরিচয় দেন। এমনকি তিনি অক্ষতযোনি বিধবার বিবাহেও আর আপত্তি করেননি।

ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তার ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিলো মধ্যযুগীয়। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিলো, তখন তিনি বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খন্ডকবিতা রচনার আদর্শ প্রবর্তন করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই ছিলো তার রচনার বিশেষত্ব। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের এ ভঙ্গি তিনি আয়ত্ত করেছিলেন কবিয়ালদের নিকট থেকে। ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক গুরু বিষয়ও তিনি সহজভাবে প্রকাশ করতেন।

স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের অনুরাগ ছিলো অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজ স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সবসময় ইংরেজি প্রভাব বর্জিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন। ভাষা ও ছন্দের ওপর তার বিস্ময়কর অধিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় তার বোধেন্দুবিকাশ (১৮৬৩) নাটকে।

ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা। পরবর্তীকালের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করার কৃতিত্বও তার।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ তার পরবর্তী বহু সাহিত্যিক ঈশ্বর গুপ্তকে ‘গুরু’পদে বরণ করেন। এমনকি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে ‘খাঁটি বাঙালি কবি’বলে অবহিত করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম-রামপ্রসাদ সেন কৃত কালীকীর্তন, কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তার জীবনবৃত্তান্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংগ্রহ। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তার স্থান অসাধারণ। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি মারা যান তিনি।

জনপ্রিয়