
আতর-আগরের ঘ্রাণে, ইবাদতের কলরবে রমজান এসেছে পৃথিবীর পাড়ায়। মসজিদগুলো মুখর হয়ে উঠেছে মুমিন বান্দার সিজদায়। রমজান শুদ্ধতার মাস। প্রতিবছর রমজান আসে, রমজান যায়, কিন্তু আমরা কি শুদ্ধ হতে পারি? রমজান সংযমের মাস।আমরা কি সংযমী হতে পারি?
আল্লাহর বিধি-নিষেধ অমান্য করছি, স্বেচ্ছাচারিতা, অন্যায়, অবিচার, পাপাচারে ডুবে আছি।
বর্বরতা, দীনহীনতা ও পশুত্বের অবসান ঘটিয়ে সভ্যতার ফুল ফোটাতেই রমজানের আগমন। তাই এই রমজানকে নিজেদের পরিবর্তনের উপলক্ষ বানাতে হবে।
সময়ের ঢেউ কখন ফুরিয়ে যাবে, টেরও পাবেন না। তাই রমজানের যথাযথ মূল্যায়ন করুন। তাকওয়া অর্জনে সচেষ্ট থাকুন। এর বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত নং ১৮৩)
রোজা মানে উপবাস থাকা নয়। মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে অন্তরের কলুষতাকে পুড়িয়ে ভস্ম করে দিতে পারার মধ্যেই রোজার সার্থকতা। এ কথা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। তবেই পূণ্যের পুষ্পে ভরে উঠবে আমাদের বাগান।
রোজা-নামাজের পাশাপাশি পবিত্র কোরআন চর্চায়ও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। পরিবারের যারা কোরআন পড়তে জানেন না, তাদেরকে কোরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা কোরআন হচ্ছে এক আলোকবর্তিকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক আলোকবর্তিকা এবং এক উন্মুক্ত কিতাব। (সুরা মায়িদা, আয়াত নং ১৫)
পবিত্র কোরআন শুধুমাত্র তিলাওয়াতের জন্যই আল্লাহ নাজিল করেননি। বরং এই কোরআনকে বোঝার এবং গবেষণা করার তাগিদ দিয়েছেন।কোরআন এমনই এক অপরিবর্তনীয় গ্রন্থ, যা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে প্রেমময় বন্ধনকে সুদৃঢ় করে। পাশাপাশি মানবজীবনের ছোট-বড় সব সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন, যারা পেটে খাবার না থাকলেও লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারেন না। আমাদের উচিত সেই মানুষগুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করা। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা। তাদের সাহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা। এটাই ইসলামের শিক্ষা। নবীজি বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে উত্তম মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৩৯৭১)
দান-সদকার পাশাপাশি আমাদের বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। নফল নামাজ আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে। এর দ্বারা বান্দার পাপ মোচন হয়। নবীজি বলেছেন, ‘তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা কর, তখনই আল্লাহ তোমার জন্য একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’ (মুসলিম শরিফ : ১/৩৫৩)
লেখক : ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।