২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২২৬ রানের লক্ষ্যে ১৬৯ রান তুলতেই বাংলাদেশ হারিয়েছিল ৮ উইকেট। এরপরে হারের চিন্তা ঘুরেফিরে আসছিল ভক্তদের মাথায়। কিন্তু পেসার শফিউল ইসলামের এক তাণ্ডবে চট্টগ্রামের মাটিতে কুপোকাত হয়েছিল ইংলিশরা। সেই ম্যাচে ৬০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ইমরুল কায়েস। আজও সেই ঘটনা হৃদয়ে গেঁথে আছে তার। অবশ্য স্মৃতিতে থাকার আরও একটি কারণ রয়েছে, সেটিই গতকাল জানিয়েছেন ইমরুল। সাদা পোশাকে শেষবারের মতো মাঠে নেমে পেয়েছেন বিসিবির সংবর্ধনা। এরপরে হাজির হয়েছিলেন সাংবাদিকদের সামনে।
স্মৃতিচারণ করে ইমরুল কায়েস টেনেছেন দশম ওয়ানডে বিশ্বকাপের একটি ঘটনা। ভক্তদের আবেগ ও সমর্থন সেদিন দেখেছিলেন খুব কাছ থেকে, ইমরুলরা ভেসেছিলেন ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে। এই বিষয়ে ইমরুল বলেছেন, ‘২০১১ বিশ্বকাপে আমার মনে আছে, আমরা যখন ইংল্যান্ডকে হারালাম। ম্যাচ শেষে আমরা যখন হোটেলে ফিরছিলাম, ঐ রাতটার কথা আমার এখনও মনে পড়ে। আমাদের খেলা শেষ হয়েছিল রাত ১০টায়, হোটেলে ফিরতে বেজেছিল রাত ১টা। মানুষজন যেভাবে অপেক্ষা করছিল, আমাদের তারা যেতে দেবে না, আমাদের সঙ্গে তারা আনন্দ করবে। পরে সেনাবাহিনী এসে মানুষগুলোকে সরিয়ে আমাদের যেতে দিয়েছিল। হোটেলের সামনেও অনেক মানুষ ছিল। ঐ রাতটা মাঝেমাঝে আমাকে নাড়া দেয়, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ও আমাদেরকে কতটা ভালোবাসে।’
সময়ের বদলে সেই ক্রিকেট নিয়েই ভক্তরা এখন বিরক্ত। একের পর এক হারের কারণে আক্ষেপের শেষ নেই সমর্থকদের। দিন বদলেছে ইমরুলেরও। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলে এবার ভাবছেন ভিন্ন কথা। আপাতত রঙিন পোশাকে খেলা কয়েক বছর চালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ইমরুল বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে খেলার মতো যে ফিটনেস লাগে, আমি যদি কাজ করতে থাকি, তাহলে হয়তো খেলতে পারব কয়েকটা বছর। কিন্তু চার দিনের ম্যাচ খেলতে যে শক্তি, যে মানসিকতা লাগে, আমার মনে হয়েছে, এখন তরুণদের সঙ্গে যদি না পারি, তাহলে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। একটা ছেলে যেভাবে বলের পেছনে দৌড়ায়, আমি তো তার সঙ্গে পারছি না। তাই মনে হয়েছে, আমি সঠিক পথে নাই। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে এক দিনে শেষ হয়ে যাবে। পুরো শক্তি দিতে পারব। যেটা চার দিনের ম্যাচে কঠিন। এ দিক থেকে আমি চিন্তা করে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এবার ইমরুলের চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভাবনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিপিএল ও ডিপিএল খেলব। এনসিএল টি-টোয়েন্টিও খেলব। সামনে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলা আছে। আমি চেষ্টা করব ক্রিকেট উপভোগ করতে। বিপিএলেও চেষ্টা করব ভালো পারফর্ম করতে।’
আর ক্রিকেট থেকে বিদায়ের পরে কী করবেন ইমরুল, সেটিও পরিকল্পনা করে রেখেছেন। মিরপুরে বসে সে কথাও বলেছেন। ‘এখন তো সবকিছু উন্মুক্ত। আমি বেশিরভাগ সময়ই অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। আমার পরিবার সেখানে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার একটা দলের হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলছি। ওখানে একটা কোচিং অ্যাকাডেমি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।’
ইমরুল দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলে গর্বিত হলেও একটি আক্ষেপ রয়েছে তার মনে, ‘আক্ষেপ একটা আছে। বাংলাদেশের হয়ে আমি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি ভাই, রিয়াদ ভাই অনেক দিন একসঙ্গে খেলেছি। যদি বড় আসর থেকে একটা ট্রফি নিয়ে আসতে পারতাম, তাহলে ভালো লাগত। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিপক্ষীয় ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ট্রফি আনতে পারিনি। আয়ারল্যান্ডে একটা পেয়েছি। তবে এশিয়া কাপ বা নিদাহাস ট্রফির মতো বড় কিছু যদি আনতে পারতাম, তাহলে ক্যারিয়ার শেষে ভালো লাগত।’
এ দিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিদায় বলা কিংবা আনুষ্ঠানিক অবসর নেওয়ার প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। মাঠ থেকে এভাবে অবসর নেওয়ার বিষয়ে ইমরুল বলেছেন, ‘বিসিবিকে ধন্যবাদ। আমি যখন তাদের প্রস্তাবটা দেই, খুবই ইতিবাচকভাবে তারা জিনিসটা নিয়েছে। আমি হয়তো আরও দুই বছর খেলতে পারতাম। কিন্তু আমি বুঝেছি যে, আমার এখন চলে যাওয়াটা ভালো। কারণ সম্মান থাকতে থাকতে নিজে বুঝতে পারাটা ভালো। সামনে তো অনেক ক্রিকেটার আছে, তারা খেলবে। আমাদের ক্যারিয়ার শেষ। আমাদের জায়গায় নতুন একটা ছেলে আসবে। তার জন্য লম্বা একটা সুযোগ থাকবে। অনেক কিছু চিন্তা করেই আসলে সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
ইমরুল কায়েস গতকাল প্রথম শ্রেণির শেষ ম্যাচটা হার দিয়ে শেষ করেছেন। তার দল খুলনা বিভাগ হেরেছে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে। তবু তার অবসরই ছিল সবার সামনে। ঢাকা বিভাগের খেলোয়াড়রা জানিয়েছেন অভিবাদন, হাতে তুলে দিয়েছেন সম্মাননা ক্রেস্ট। আর বিসিবির পক্ষে থেকে পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকরাও জানিয়েছেন অভিবাদন।