বয়সভিত্তিক দলে নিয়মিত নেতৃত্ব দিতেন বলেই মেহেদী হাসান মিরাজের মাঝে ভবিষ্যতের অধিনায়ককে দেখেছিলেন অনেকে। অভিষেকের আট বছরেও নেতা হতে পারছিলেন না বলে কিছুটা হতাশাও হয়তো ভর করেছিল তরুণ এ ক্রিকেটারের মাঝে।
তবে ১১ নভেম্বর সে আক্ষেপের অবসান ঘটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে ১৭তম ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয় মিরাজের। শান্তর সেই চোটের কারণেই আজ দেশের ১৪তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবেও আবির্ভাব হচ্ছে তাঁর। তবে অ্যান্টিগার পেস উইকেটে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে মিরাজকে।
শারজায় আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ও সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেতৃত্বের অভিষেকেই বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছিলেন মিরাজ। সে ম্যাচে বিপদের মুখে ৬৬ রানের ইনিংস খেললেও ব্যয় করেছিলেন ১১৯ বল। যত কঠিন উইকেট ও পরিস্থিতিই হোক না কেন, ওয়ানডে মেজাজের সঙ্গে এ ইনিংস একেবারেই যায় না। টেস্টে যদি মিরাজ এমন দায়িত্বশীল ইনিংস খেলতে পারেন, অবশ্যই বাহবা পাবেন। তবে কাজটা মোটেই সহজ হবে না। কারণ অ্যান্টিগার নর্থ সাউন্ডের স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম যেন বাংলাদেশের জন্য বধ্যভূমি। এ মাঠে সর্বশেষ দুটি সফরে টেস্ট দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে এখানে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমে ৪৩ রানে বিধ্বস্ত হয়েছিল সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ, যা টেস্টে টাইগারদের সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোর। ২০২২ সালে এখানে ১০৩ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। এবার চ্যালেঞ্জটা আরও বেড়ে যাবে, কারণ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোটের কারণে দলে নেই। তাদের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের নবীন ব্যাটিং লাইনের পক্ষে নর্থ সাউন্ডের বাউন্সি উইকেটে ক্যারিবীয় পেস আক্রমণ সামলানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে। মুমিনুল হক ও লিটন দাস ছাড়া নির্ভর করার মতো বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনে নেই বললেই চলে। মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, জাকির হাসানরা এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেননি।
জাডেন সিলস ও শামার জোসেফের সঙ্গে আলজারি জোসেফ ফেরায় উইন্ডিজের পেস আক্রমণ বেশ ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। স্কোয়াডে কেমার রোচও আছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে যার রেকর্ড দুর্দান্ত। এখানে আগের দুই টেস্টে তিনিই বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামিয়েছিলেন। তাই চারজনের পেস আক্রমণ নিয়ে নামতে পারে ক্যারিবীয়রা। উইকেট দেখে পেস অলরাউন্ডার অ্যান্ডারসন ফিলিপকেও নামিয়ে দিতে পারে স্বাগতিকরা। তবে এই বাউন্সি উইকেটে কিন্তু উইন্ডিজকেও ব্যাট করতে হবে। আর উইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনের প্রথম সাতজনের গড় কিন্তু চলতি বছর টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্য সর্বনিম্ন।
চলতি বছর ৭ টেস্ট খেলে মাত্র ১টি জিতেছে তারা মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য। ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনও অভিজ্ঞতায় বেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশের পেস আক্রমণও খারাপ করছে না। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে আসার পেছনে অন্যতম ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের পেস বিভাগের। এমনকি ভারত ও ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে যাওয়া সিরিজেও আশা জাগানিয়া বোলিং করেছিলেন নাহিদ রানা-হাসান মাহমুদরা। বিশেষ করে দুরন্ত গতিতে বোলিং করা নাহিদ রানাকে সামলাতে বেগ পেতে হবে ক্যারিবীয়দের। সে সঙ্গে অভিজ্ঞ তাসকিন আহমেদ নিজেকে মেলে ধরতে পারলে ভালো কিছু হতেও পারে।
তবে এই লড়াইয়ে বাগড়া দিতে পারে প্রকৃতি। ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেট ঐতিহাসিকভাবেই পেস-সহায়ক। নর্থ সাউন্ডে আবার টেস্টের পাঁচ দিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে পেসারদের সুবিধা আরও বেড়ে যাবে। বিশেষ করে আজ সকালে বৃষ্টি হলে শুরুতে ব্যাটিং করা দল বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাবে।