ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৭তম আসর বসবে আগামী বছর। তার আগে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী মেগা নিলাম। সেই মেগা নিলামে তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারের নাম যেমন ছিল, ছিল রথী-মহারথীদেরও। বাংলাদেশের ১২ খেলোয়াড়ের নামও ছিল মেগা নিলামের নিবন্ধন তালিকায়। কিন্তু ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউই কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ফলে এবারের আইপিএল কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পড়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখানো আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের নিয়ে ঠিকই কাড়াকাড়ি পড়েছিল নিলামে।
গত রোববারের পর (২৪ নভেম্বর) সোমবার আইপিএলের মেগা নিলামের দ্বিতীয় দিনেও বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় দল পাননি। ফলে বাংলাদেশিদের কাছে আইপিএলে আগামী আসর কিছুটা হলেও বিবর্ণ হয়ে গেল। তবে তাতে ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের আয়োজকদের থোড়াই কেয়ার! অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই আয়োজিত এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসরে বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া সেভাবে কেউই আইপিএলে আলো ছড়াতে পারেননি। এই দুজনেরই বেশ কয়েকটি করে আসরে খেলার সুযোগ হয়েছে। শিরোপার স্বাদও পেয়েছেন সাকিব-মোস্তাফিজ।
আইপিএলে অতীতে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল, লিটন দাসরা দল পেলেও তাদের ক্যারিয়ার আটকে গেছে এক বা দুই ম্যাচেই। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ তারা। কেউ কেউ তো ম্যাচ হারিয়ে হয়েছেন খলনায়ক।
বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে ২৪ বছর আগে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলছে একদম শুরু থেকেই। এরপরও বৈশ্বিক ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য শক্তি হয়ে উঠতে ব্যর্থ টাইগাররা। অথচ ২০১৫ সালে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা আফগানিস্তান তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রিকেটে। সবশেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাতিয়েছে আফগানরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো সেমিফাইনালেও খেলে ফেলেছে তারা। প্রতি বছরই দেশটি থেকে একের পর এক দুর্দান্ত ব্যাটার ও বোলার উঠে আসছে। যাদের চাহিদা আছে বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগগুলোয়।
আফগান ক্রিকেটারদের চাহিদার প্রমাণ পাওয়া গেল সদ্য সমাপ্ত আইপিএলের মেগা নিলামেও। দেশটির মোট ৬জন খেলোয়াড় এবারের মেগা নিলামে দল পেয়েছেন। এবারের মেগা নিলামে আফগানিস্তানের ১৮ খেলোয়াড় নাম লিখিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে আইপিএলের আগামী আসরে ৭জন আফগান খেলোয়াড়কে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলতে দেখা যাবে। তারা হলেন- রশিদ খান, নূর আহমেদ, আল্লাহ গজনফর, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, ফজলহক ফারুকি, করিম জানাত এবং রহমানউল্লাহ গুরবাজ।
রশিদ খান (গুজরাট টাইটান্স, ১৮ কোটি): এদের মধ্যে নিলামের আগেই দল পেয়েছিলেন রশিদ খান। গুজরাট টাইটান্স তাকে ধরে রেখেছে। আইপিএলে সবচেয়ে বেশ আয় করা আফগান ক্রিকেটার এই লেগ স্পিনারই। ১৮ কোটি রুপির বিনিময়ে তাকে দলে ধরে রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
নূর আহমেদ (চেন্নাই সুপার কিংস, ১০ কোটি)এবারের আইপিএলের অন্যতম চমক আরেক আফগান স্পিনার নূর আহমেদ। ১৯ বছর বয়সী এই রহস্য স্পিনারের এবারের নিলামে ভিত্তিমূল্য ছিল ২ কোটি। কিন্তু নিলামে দর কষাকষির পর নুরকে ১০ কোটি রুপির বিনিময়ে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএলের গত আসরে গুজরাটের হয়ে রশিদ খানের সঙ্গে ভয়ঙ্কর এক জুটি বেঁধেছিলেন নূর। ১৩ ম্যাচে শিকার করেছিলেন ১৬ উইকেট।
আল্লাহ গজনফর (মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, ৪.৮ কোটি): ১৮ বছর বয়সী আল্লাহ গজনফর বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেও তার স্পিন রহস্যের মায়াজালে ভুগিয়েছেন ব্যাটারদের। আইপিএলের মেগা নিলামেও তাকে নিয়ে বেশ কাড়াকাড়ি দেখা গেছে। ৭৫ লাখ রুপি ভিত্তিমূল্যের এই রহস্য স্পিনারকে দলে ভেড়াতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসকে খরচ করতে হয়েছে ৪.৮ কোটি রুপি।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই (পাঞ্জাব কিংস, ২.৪ কোটি): আফগানিস্তানের এই নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডারের ভিত্তিমূল্য ছিল দেড় কোটি রুপি। পাঞ্জাব তাকে দলে ভিড়িয়েছে ২.৪ কোটি রুপির বিনিময়ে। নতুন বলে সুইং করানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ব্যাটিং সামর্থের প্রমাণ রাখেন আজমতউল্লাহ। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও রিস্ট পজিশনের জন্য ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে প্রায়ই তুলনা করা হয় তাকে।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ (কেকেআর, ২ কোটি): আইপিএলে আফগান বোলারদের আধিপত্যের মধ্যেই ব্যাটারদের মধ্যে রহমানউল্লাহ গুরবাজ নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন। বিস্ফোরক এই ওপেনার ও উইকেটকিপারকে ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপির বিনিময়ে দলে টেনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। বিগত সময়েও এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জার্সি গায়েই খেলেছেন রহমানউল্লাহ।
ফজলহক ফারুকি (রাজস্থান রয়্যালস, ২ কোটি): সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৭ উইকেট শিকার করে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছিলেন ফজলহক ফারুকি। সেরা ১০ উইকেট শিকারির মধ্যে তার চেয়ে ভালো গড়ে উইকেট শিকার করতে পেরেছিলেন শুধু জাসপ্রীত বুমরাহ। এবারের আইপিএলে তার দল পাওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপিতেই তাকে পেয়েছে রাজস্থান রয়্যালস।
করিম জানাত (গুজরাট টাইটান্স, ৭৫ লাখ): করিম জানাতের দল পাওয়াটা চমক হয়ে এসেছে। ভিত্তিমূল্য ৭৫ লাখ রুপিতেই এই বোলিং অলরাউন্ডারকে দলে ভিড়িয়েছে গুজরাট।
এবারের মেগা নিলামে দল না পাওয়া বড় তারকার তালিকায় আছেন বেশ কয়েকজন আফগানও। আইপিএলে ধারাবাহিক পারফর্ম করা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি, পেসার নাভিন-উল হক এবং রহস্য স্পিনার মুজিব-উর রহমানের দল না পাওয়াটা অপ্রত্যাশিতই।