সিরিজটিকে যেন বাংলাদেশকে হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেয়ার পালা হিসেবেই নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচটি জিতে টানা ১১ ম্যাচের পরাজয়ের ধারা থামাতে পেরেছিল তারা। সেই জয়ে উজ্জীবিত ক্যারিবিয়ানরা এবার ব্যাটে-বলে আরও দাপুটে পারফরম্যান্সে আদায় করে নিল আরেকটি জয়। তাতে অবসান হলো তাদের দীর্ঘ এক অপেক্ষার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখেই সিরিজ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এর আগে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সর্বশেষ নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজ জয়ের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শাই হোপের নেতৃত্বে মাত্র ৩৬.৫ ওভারেই বাংলাদেশের লক্ষ্য তাড়ায় সফল হয়েছে। ম্যাচের শুরুতে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৫ ওভার ৫ বলে ২২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৩ ওভার ১ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ক্যারিবীয়দের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার ব্রেন্ডন কিং। আরেক ওপেনার এভিন লুইস ৪৯ ও কেসি কার্টি ৪৫ রান করেন। বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নেন রিশাদ হোসেন, নাহিদ রানা ও আফিফ হোসেন।
সেন্ট কিটসের একই ভেন্যুতে প্রথম ওয়ানডেতে ২৯৪ রান করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু আজ টাইগাররা ২৩০–ও পেরোতে পারেনি। তবে অষ্টম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তানজিম হাসান সাকিব রেকর্ডগড়া জুটি না বাধলে ততদূরও যাওয়া হতো না সফরকারীদের। দ্বিতীয় ইনিংসে লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই সঠিক কক্ষপথে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উদ্বোধনী জুটিতে কিং ও লুইস মিলে ১০৯ রান তোলেন। মূলত এই জুটিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।
তবে দুজনই ফিরেছেন ব্যক্তিগত দুটি মাইলফলক অপূর্ণ রেখে। এর মাঝে অবশ্য সৌম্য সরকার ক্যাচ ছেড়ে লুইসের ইনিংস বড় করার সুযোগ করে দেন। ব্যক্তিগত ২৮ রানে ব্যাট করা অবস্থায় মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ তুলেছিলেন লুইস। কিন্তু সহজ ক্যাচ হাত থেকে ফেলেছেন সৌম্য। ফলে ৭৯ রানে উইকেট নেওয়ার সুযোগও হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের।
পরে ক্যারিবীয়দের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ২১তম ওভারে। আগের ওভারেই রানার বলে আঘাত পেয়ে বেশ ভুগছিলেন লুইস। তখনই তিনি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিকঠাক দাঁড়াতেও কষ্ট হচ্ছিল তার। খানিক বাদেই টাইগার লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন আক্রমণে আসতে তার হাতেই ক্যাচ দিয়েছেন লুইস। ৬২ বলে তিনি ফিরলেন ৪৯ রান করে। কোনো চাপই আসতে দেননি কিং। তিনে নামা কেসি কার্টিকে নিয়ে ৬৬ রানের জুটি গড়েন তিনি।
নাহিদ রানার বলে আউট হওয়ার আগে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেরেন কিং। ৭৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৮ চারে ৮২ রান করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। দলীয় ১৭৫ রানে তিনি টাইগার পেসার নাহিদ রানার দুর্দান্ত এক ইয়র্কার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন। তখন অবশ্য উইন্ডিজদের জয় পেতে কেবল কিছু সময়েরই অপেক্ষা। কেসি কার্টিকে ফেরান আফিফ হোসেন।
ফিফটি থেকে পাঁচ রান দূরে থাকতে আউট হন কার্টি। অনিয়মিত বোলার আফিফের বলে ব্যাক-কভারে থাকা রানার হাতে তালুবন্দী হন কার্টি। এর আগে ৪৭ বলে তিনি ৪৫ রান করেন। তবে চতুর্থ উইকেটে শেরফান রাদারফোর্ড এবং শাই হোপ মিলে ৩৩ রানের জুটি গড়ে দ্রুতই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। হোপ অপরাজিত ছিলেন ১৭ রানে। রাদারফোর্ডের ব্যাট থেকে আসে ২৪ রান।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিতভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের সামনে খেই হারায় বাংলাদেশ। ৫ বলে মাত্র ২ রান করে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। পরের দুই ব্যাটার লিটন দাস এবং মেহেদী মিরাজও অনুসরণ করেছেন সৌম্যকে। লিটন করেছেন ১৯ বলে ৪ রান আর ৫ বলে ১ রান করেছেন অধিনায়ক মিরাজ। শুরুটা ভালো করলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তানজিদ তামিম। ৩৩ বলে ৪৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে জেইডন সিলসের বলে আউট হন তিনি।
এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে দলের খাতায় ১০০ রান যোগ হওয়ার পর ভুল শট খেলে দলকে আবার চাপে ফেলেন আফিফ। ২৯ বলে ২৪ রান করে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর ৮ বল খেললেও রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন রিশাদ। ১১৫ রান তুলতেই তারা ৭ উইকেট খরচ করে ফেলে। ক্রিজে তখন একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শঙ্কা জেগেছিল, ১২৫ কিংবা ১৩০ রানের মধ্যে ইনিংস গুটিয়ে যাওয়ার। সেখান থেকে রিয়াদ-তানজিমের ৯২ রানের জুটি সফরকারীদের মান বাঁচানো ২২৭ রানের পুঁজি এনে দিয়েছে।
ওয়ানডেতে অষ্টম উইকেটে এতদিন বাংলাদেশের রেকর্ড রানের জুটি ছিল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোহাম্মদ মিঠুনের। ২০১৯ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৪ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। তবে আজ ওয়েস্ট ইন্ডজের বিপক্ষে রিয়াদ-তানজিমের দারুণ ইনিংস খেললেও তানজিমের আক্ষেপ থেকে যাবে ফিফটি না পাওয়ার। ৬২ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রান করে রস্টন চেজকে স্ট্রেইট তুলে মারতে গিয়ে তারই হাতে ধরা পড়েন।
ক্রিজে স্থায়ী হননি মাহমুদউল্লাহও। অবশ্য ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি। ৯২ বলে ৪ ছক্কা ও ২ চারে ৬২ রান করে আউট হন তিনি। শেষদিকে শরিফুল ইসলামের ৮ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ২২৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। পুরো ম্যাচে রিয়াদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৬২, তানজিদ তামিমের ৪৬ এবং তানজিম সাকিবের ৪৫ রানের ইনিংস ছাড়া বাকি ব্যাটাররা পুরোদমে ব্যর্থ। ফলে ৪৫.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
উইন্ডিজদের হয়ে মাত্র ২২ রানের বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন পেসার জেইডেন সিলস। গুদাকেশ মোতি নেন ২ উইকেট।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে দুই দল আগামী ১২ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।