নাজমুল হোসেন শান্তকে অধিনায়ক করা হয়েছিল এক বছরের জন্য। ৩১ ডিসেম্বর সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শান্তকে নেতৃত্বে রেখে দেওয়া হচ্ছে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ সেভাবে চিন্তা করছেন বলে জানা গেছে। তবে বর্ধিত মেয়াদ কত দিনের হতে পারে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক করা হয় শান্তকে। সাকিব আল হাসান চোটে পড়ায় ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে বাঁহাতি এ ব্যাটারের। তিন সংস্করণের অধিনায়ক হিসেবে গত এক বছর ভালোই করেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০তে ভালো কিছু ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ককে তাই ধরে রাখতে চায় বিসিবি। এ ব্যাপারে ফারুক আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে মেয়াদ বাড়বে বলে জানান তিনি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে সাকিবের সহকারী ছিলেন শান্ত। সাকিব চোটে পড়ায় বিশ্বকাপ ম্যাচেও নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল তাঁকে। বিশ্বকাপ শেষে তিন সংস্করণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজে জন্য। কিউইদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজেই বাজিমাত করেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করে জয় দিয়ে। সিলেটের স্পোর্টিং উইকেটে কিউইদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় ছিল সেটি।
তবে বেশি চমক ছিল নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে এবং টি২০ জয়। প্রথমবারের মতো নেপিয়ারে ওয়ানডে ও টি২০ ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারলেও টি২০ সিরিজ ড্র করেছিল ১-১ ব্যবধানে। বাঁহাতি এ ব্যাটারের নেতৃত্ব নিয়ে খুশি ছিলেন সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন মনে করা হয় রাওয়ালপিন্ডিতে স্বাগতিক পাকিস্তানকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা।
টি২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে খেলার কৌশল নিয়ে বিতর্ক হলেও টুর্নামেন্টে জয়ের দিক দিয়ে সফল বিশ্বকাপ দাবি করেছিল বিসিবি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বেশি খারাপ করেছে ভারত সফরে। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়াও ছিল লজ্জার। শান্তর নেতৃত্বে ১০টি টেস্ট ম্যাচ খেলে তিনটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। ১১ ওয়ানডে খেলে জয় চারটিতে। ২৪টি ম্যাচের ১০টিতে জয়। বছরের শেষ সিরিজটি খেলা হয়নি তাঁর। আফগানিস্তানের কাছে শুধু ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারেনি বাংলাদেশ, চোটের কারণে হারিয়েছিল মুশফিকুর রহিম ও শান্তকে। কুঁচকির চোটমুক্ত হয়ে বিসিএল টি২০ দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়া হয়নি।
নিয়মিত অধিনায়ক না থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শান্তর সহকারী হিসেবে অটো দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ১-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ ছিল হতাশার। টি২০ দলে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়েছিল লিটন কুমার দাসকে। তিনি ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ হলেও অধিনায়ক হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাই নেতৃত্বের ভাগাভাগির আলোচনায় মিরাজের মতো লিটনও থাকছেন। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে নেতৃত্বে টিকে থাকার দাবি জোরালো করেছেন।
সমস্যা হচ্ছে লিটনের ফর্ম। উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার রান খরায় থাকায় টি২০ দলে থাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ কর্তারা মনে করেন, শুধু নেতৃত্ব দিয়ে টি২০ দলে থাকতে পারবেন না লিটন। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ শেষে তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব দেওয়া হলে টি২০ অধিনায়ক থাকতে চান তিনি। যদিও লিটনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, টি২০ দলে জায়গা ধরে রাখা। বিপিএলে ভালো করলে সে সুযোগ হয়তো থাকবে। বিসিবির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে সিরিজে পরবর্তী টি২০ খেলা। ওই পর্যন্ত লিটনকে ভালো খেলতে হবে। টি২০ দলে থাকার জন্য রান করতে হবে।’ বোঝা যাচ্ছে শান্তর বিকল্প এ মুহূর্তে ভাবছে না বিসিবি।