ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ , ২ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

হবিগঞ্জে নিজ গ্রামে আজ আসছেন ফুটবলার হামজা

খেলা

আমাদের বার্তা ডেস্ক 

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৭ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

হবিগঞ্জে নিজ গ্রামে আজ আসছেন ফুটবলার হামজা

এমভি হামজা– উদ্ধারকারী এই নৌযানের নামটি কমবেশি অনেকেরই শোনা। দেশে নৌডুবির ঘটনা ঘটলে ত্রাণকর্তা হয়ে ছুটে আসে এটি। ৬০ টনের শক্তি দিয়ে ডুবন্ত যান তুলে আনার শক্তি আছে এর। একইভাবে তলিয়ে যাওয়া দেশের ফুটবলে তেমন একজন হামজা চৌধুরী আসছেন আজ।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের নিয়মিত দর্শকের কাছে তিনি ‘ডেস্ট্রয়ার’। ঝাঁকড়া চুলের এই বিধ্বংসী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করায় দারুণ দক্ষ। লিস্টার সিটির সেই হামজা বর্তমানে ধারে শেফিল্ডের হয়ে খেলছেন। ক্লাবের সেই দায়িত্ব সামলেই এবার মাতৃভূমি বাংলাদেশের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন।

ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হবে তাঁর। ১৮৩ নম্বরে থাকা বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাঙ্কিং এগিয়ে নিতে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করতে এবং প্রতিপক্ষের সামনে সমীহ আদায় করতেই হামজা চৌধুরী আসছেন। ইংলিশ লিগে খেলা কোনো ফুটবলারের এই প্রথম বাংলাদেশ দলে আগমন। তাই তাঁকে বরণ করতে প্রস্তুত তাঁর জন্মভিটা হবিগঞ্জের স্নানঘাটের মানুষ। 

এর আগে অনেকবারই নিজের গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। সেই সময় হামজা দেওয়ান চৌধুরীর পরিচয় ছিল ‘ইংলিশম্যান’। বাংলাদেশি মা রাফিয়া চৌধুরীর পরিচয়ে বাহারি চুলের স্টাইলে নানা রঙের সাজে গ্রামে গেলেও সিলেটের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের মানুষ তাঁকে চিনত বিদেশি হিসেবেই! কারণটাও স্বাভাবিক, সেই সময় ব্রিটিশপ্রবাসী হামজা বাংলাদেশি হননি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত বছর কাগজে-কলমে বাংলাদেশি হওয়ার পরই এ ফুটবলার হয়ে ওঠেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গত ডিসেম্বরে প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লিস্টার সিটিতে খেলার সময় হামজাকে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর অনুমতি দেয় ফিফা।

এরপর শুরু হয় ক্ষণগণনা। কবে বাংলাদেশে আসবেন ২৭ বয়সী শেফিল্ড ইউনাইটেডের তারকা। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে আজ। বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে নামবেন তিনি। সেখান থেকে গাড়িতে সরাসরি চলে যাবেন নিজ গ্রামে। ১১ বছর পর নিজ গ্রামে যাচ্ছেন হামজা। তাঁর আগমন ঘিরে উন্মাদনা বইছে দেশের ফুটবলপ্রেমীর মধ্যে।

জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীর মতো প্রবাসী ফুটবলারের আবির্ভাব ঘটেছিল বাংলাদেশে। কিন্তু হামজার মতো বিশ্বমানের তারকা এই প্রথম। শুধু লিস্টার সিটিই নয়, ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় ফুটবল দলে খেলা হামজার ক্যারিয়ার প্রোফাইলটাও উচ্চ পর্যায়ের। ফুটবলের গ্লোবাল স্টারও বলা চলে তাঁকে। বাংলাদেশের ফুটবলে এত বড় তারকার আবির্ভাব ঘটেনি। একটু বাড়িয়ে বললে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় তারকা এখন হামজা! তাই তো তাঁকে বরণ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। আজ সিলেটে আসার আগে গতকাল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে শেফিল্ড ওয়েডনেসডের বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি। মাঠ থেকে ফিরেই সব প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশে রওনা হয়েছিলেন হামজা। নিজ গ্রাম হবিগঞ্জে আজ রাত কাটাবেন তিনি। ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরার কথা হামজার। ১৯ মার্চ টিম ফটোসেশনে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেন এ ডিফেন্ডার।

সিলেট বিমানবন্দরে জানানো হবে অভ্যর্থনা
হামজার জন্য সেজেছে সিলেট ও হবিগঞ্জ। হামজাকে বরণ করতে ইতোমধ্যে সিলেটে পৌঁছেছেন বাফুফের চার নির্বাহী সদস্য। সিলেট ব্যুরো থেকে মুকিত রহমানী জানান, বিমানবন্দরে হামজাকে অভ্যর্থনা জানাবেন সিলেটের ক্রীড়ানুরাগী ও ক্ষুদে ফুটবলাররা। হামজার আগমন সামনে রেখে গতকাল সিলেট বিমানবন্দর সড়কসহ তাঁর গ্রামের বাড়িতে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সিলেটে কোনো কর্মসূচি নেই, হবিগঞ্জের বাহুবলে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ওসমানী বিমানবন্দর থেকে নামার পর হামজা সরাসরি চলে যাবেন বাহুবলে। সিলেট থেকে পুলিশ তাঁকে এসকট দেবে। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে হামজাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাঁকে এসকট করে নগরী পার করে দেওয়া হবে। একইভাবে জেলা পুলিশও সড়কে তাঁর নিরাপত্তা দেবে।

স্নানঘাটে উৎসবের আমেজ
হামজার আগমন ঘিরে নিজ গ্রাম স্নানঘাটসহ পুরো জেলায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী জানান, সাজসাজ রব পড়েছে হামজার নিজ গ্রামে। তাঁকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নিজ এলাকার কৃতী সন্তানকে বরণ করতে প্রস্তুত গ্রামবাসী। হামজার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে আসছেন তাঁর মা, ভাই, স্ত্রী ও তিন সন্তান। বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী চলে এসেছেন আগেই। 

শান্ত ও নম্র স্বভাবের হামজা খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন ছড়িয়েছেন খ্যাতি, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছেও অত্যন্ত প্রিয়। তাই তো হামজাও দিচ্ছেন তাদের আস্থার প্রতিদান। গ্রামের বাড়ি স্নানঘাটে গড়ে তুলেছেন একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা। যেখানে পড়াশোনা করছে এতিম শিশুরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ১১ বছর পর দেশে আসছেন হামজা চৌধুরী। পরিবারের সদস্যরা জানান, ভাত-গরুর মাংস তাঁর প্রিয় খাবার। দেশি সবজিও তাঁর পছন্দের। হামজার খাবারের তালিকায় বেশ কয়েক ধরনের মাংস পরিবেশন করা হচ্ছে বলে জানান তারা।

আর রাতে ঘুমাবেন পৈতৃক ঘরে। এ বিষয়ে সফর আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সন্তান দেশের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটি আমাদের জন্য গৌরবের। তাঁর আগমন ঘিরে আমরা উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে তরুণরা তাঁকে একনজর দেখার জন্য বিশেষ আগ্রহে বসে আছেন। হামজা যখন ছোট সময়ে বাড়িতে আসতেন, তখন আমিও তাঁর সঙ্গে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের প্রতি ছোটবেলা থেকেই তাঁর টান ছিল।’ শুধু হামজা নন, তাঁর মতো আরও প্রবাসী ফুটবলারের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে দেখতে চান হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী।

জনপ্রিয়