
‘তারুণ্যের অংশগ্রহণ, খেলাধুলার মানোন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনের রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছরের মতো এবারও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দিবসটি উপলক্ষে র্যালি ও সুবিধাবঞ্চিত অনূর্ধ্ব-১৭ শিশুদের ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা হয়।
রোববার (৬ এপ্রিল) সকাল সোয়া ৯টায় বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সামনে থেকে শুরু হওয়া র্যালির উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
র্যালিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বিভিন্ন ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন অংশ নেয়। ঘোড়ার গাড়ি ও ব্যান্ড পার্টিসহ সুসজ্জিত র্যালিটি গুলিস্তানে অবস্থিত জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় স্টেডিয়ামে সুবিধাবঞ্চিত অনূর্ধ্ব-১৭ শিশুদের ফুটবল টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন শেষে প্রথম ম্যাচের খেলা কিছুক্ষণ উপভোগ করেন আসিফ মাহমুদ। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটোরিয়ামে প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় এক বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, আমরা আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস উদযাপন করছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে কিছু পলিসি নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে বিগত সময় বিভিন্ন সেক্টরকে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও আমাদের ফেডারেশনগুলো এবং উপজেলা-জেলা, বিভাগীয় সংস্থাগুলো অনেকাংশেই রাজনৈতিকভাবে বেদখল হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই, যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, বাংলাদেশ যে পরিস্থিতিতেই যাক না কেন, ক্রীড়া ক্ষেত্রটা প্রকৃত যারা ক্রীড়া সংগঠক, যারা সাবেক ক্রীড়াবিদ আছেন, ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট-ক্রীড়ানুরাগী তাদের হাতেই থাকা উচিত এবং তাদের হাতেই নিরাপদ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে পরিবর্তন এবং ফেডারেশনগুলো কমিটি পুনঃগঠন কাজ চলমান রয়েছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে মান উন্নয়নের জন্য সবাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন এবং বিগত সাত মাসে অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন ক্রীড়াবিদরা। এজন্য তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাতে চাই।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদসহ আরো অনেকে।
সবশেষে, সুবিধাবঞ্চিত অনূর্ধ্ব-১৭ শিশুদের ফুটবল টুর্ণামেন্টে খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন আসিফ মাহমুদ। এ ছাড়াও তারুণ্যের শক্তি ধারণ করে দিবসটি উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, ক্রীড়া ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন, বোর্ড, ক্রীড়া সংগঠকসহ ক্রীড়াঙ্গনের সর্বস্তরে বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
খেলাধুলা শিশু ও তরুণদের মেধা ও মনন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যবসায়, দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যপরায়ণতার সৃষ্টি হয়। দেশ বদলের প্রত্যয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে পুনর্জীবিত করতে দেশব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উদযাপন করেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত মূল্যবোধের মেলবন্ধনে আয়োজিত এই উৎসবে তরুণরা দেশ পুর্নগঠনে তাদের সৃজনশীলতা, মেধা, যোগ্যতা ও মননশীলতার স্বাক্ষর রেখেছে।
সময়ের পরিক্রমায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। পাশাপাশি ক্রীড়া অবকাঠামোর বুনিয়াদ শক্ত হয়েছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রীড়ার ব্যাপ্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সব উপজেলায় ইতোমধ্যে ১২৫টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। আরো ২০১টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়ামের নির্মাণের পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি ৪টি বিভাগীয় স্টেডিয়াম, ৬৪টি জেলায় ৬৮টি জেলা স্টেডিয়ামসহ দেশব্যাপী ১৮টি সুইমিংপুল, ১০টি কিট ইনডোর স্টেডিয়াম, ৭টি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ সব কাজ পরিচালিত হচ্ছে।