যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। তারপরও বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মার ক্ষেত্রে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যেসব দেশে যক্ষ্মা বেশি, সেসব দেশে উপসর্গ ছাড়াই বহু মানুষের মধ্যে রোগটি দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে শিশুদের যক্ষ্মা অনেকে দেশে ঠিকভাবে শনাক্ত হচ্ছে না।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ইন্দোনেশিয়ার বালিতে শুরু হওয়া যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলা হয়। যক্ষ্মা ও ফুসফুসের রোগবিষয়ক আন্তর্জাতিক মোর্চা দ্য ইউনিয়ন এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সারা বিশ্বের তিন হাজারের বেশি প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
সরকারের চারজন প্রতিনিধি ছাড়া আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ থেকে এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দ্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গে মার্কস বলেন, যেসব দেশে যক্ষ্মা রোগী আছে, সেসব দেশে নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এসব দেশে বহু মানুষের যক্ষ্মা হচ্ছে, কিন্তু তাদের কোনো উৎসর্গ দেখা যাচ্ছে না। এরা যক্ষ্মা ছড়ানোর বড় ঝুঁকির কারণ। যক্ষ্মা গবেষক গে মার্কস বলেন, যক্ষ্মা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, জনসমাগম কমাতে হবে। বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান খোলামেলা রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেক মানুষের যক্ষ্মা পরীক্ষার দিকে যেতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইন্দোনেশিয়ার সমাজকর্মী আনি হার্না সারি তাঁর দুইবার যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
আনি হার্না সারি বলেন, যক্ষ্মা শনাক্তকরণের জিন এক্সপার্টের কার্টিজের দাম কমাতে হবে।
সারা বিশ্বের সমস্যা শিশুদের যক্ষ্মা। শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণে মল পরীক্ষার সুবিধা নিয়ে একটি অধিবেশনে আলোচনা করেন ২০ জন গবেষক, বিজ্ঞানী ও নীতিনির্ধারক। মল পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্ত করার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে অনেক আগেই। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, মালে, জাম্বিয়ায় এ নিয়ে কাজ হচ্ছে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইসিডিডিআরবির সংক্রমণ রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী এস এম মাজেদুে রহমান। তিনি বলেন, দেশের প্রায় সব জেলায় এই পরীক্ষা হচ্ছে।
কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মল পরীক্ষা করলে শিশুদের যক্ষ্মা যথাযথভাবে শনাক্ত করা যায়, তা নিয়ে বক্তব্য দেন আফ্রিকার গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। তিন ঘণ্টার এই অধিবেশনের একজন সভাপতি ছিলেন আইসিডিডিআরবির সংক্রমণ রোগ বিভাগের পরিচালক সায়রা বানু।
বিকেলের একটি অধিবেশনে বলা হয়, বিভিন্ন দেশের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে যক্ষ্মা রোগীদের পুষ্টিসহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। একই অধিবেশনে বলা হয়, অভিবাসনের কারণে যক্ষ্মা বাড়ছে। এর জন্য অভিবাসীরা দায়ী নন।
অন্য একটি অধিবেশনে যক্ষ্মার নতুন টিকা তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে বলা হয়, প্রায় এক ডজন ওষুধের পরীক্ষা শেষের দিকে। এর মধ্যে পাঁচটির পরীক্ষা–নিরীক্ষা ‘ট্রায়াল ফেজ–৩’ পর্যায়ে আছে। এসব ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।