রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে অবশেষে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই অনুমতি পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু মেয়াদের শেষ সময়ে এসে কেন এই অনুমতি দিলেন বাইডেন?
সোমবার (১৮ নভেম্বর) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র (এটিএসিএমএস) দিয়ে এই ধরনের দূরপাল্লার হামলার অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কারণ তারা ভেবেছিল, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে যুদ্ধ আরও বাড়বে।
৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর এই নীতি বদলালো যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির অধীনে কিয়েভকে মার্কিন সমর্থন দেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তুতে আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা সাধারণত এটিএসিএমএস নামে পরিচিত।
কিন্তু এতদিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে লকহিড মার্টিন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এলএমবিএম) সরবরাহ করেছে; যেটি ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত করতে সক্ষম।
এ বিষয়ে ইউক্রেন যুক্তি দিয়েছিল যে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি না দেয়া মানে ‘পিঠে এক হাত বেঁধে যুদ্ধ করতে বলা’।
সম্প্রতি কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলে রাশিয়াকে সমর্থন করার জন্য উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের মোতায়েন করার পর থেকেই অবস্থান পাল্টানোর কথা ভাবে ওয়াশিংটন। গত আগস্ট থেকে সেই অঞ্চল দখল করে রেখেছে ইউক্রেন।
এছাড়াও, হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসার পর ইউক্রেনে মার্কিন সমর্থন নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। তাই দায়িত্ব ছাড়ার আগে বাইডেন যতটুকু সম্ভব, কিয়েভের জন্য করে যেতে চান।
সামরিকভাবে ইউক্রেনের হাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা; যাতে সামনে যেকোনো শান্তি আলোচনায় ইউক্রেন সুবিধা পেতে পারে।
এখনও এই পদক্ষেপের বিষয়টি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিশ্চিত করেননি। তবে রোববার তিনি বলেছেন, ‘কথা দিয়ে হামলা নয়, তাদের পক্ষ হয়ে মিসাইল কথা বলবে।’
ইউক্রেন এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। সম্ভবত প্রথমে কুরস্ক অঞ্চলের চারপাশেই হামলা হবে, যেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনী ১০০০ বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চল দখল করে আছে।
কারণ রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা কুরস্ক ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে পাল্টা আক্রমণ করবে বলে মনে করছেন ইউক্রেনীয় এবং মার্কিন কর্মকর্তারা।
এই হামলা প্রতিরোধে ইউক্রেন ক্ষেপণাস্ত্র (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি, অবকাঠামো এবং গোলাবারুদ স্টোরেজসহ অন্যান্য অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে কিয়েভ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ সম্ভবত যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না। ওয়াশিংটনের তরফ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে- এমন ধারণা থেকে এরমধ্যেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে পাল্টা প্রতিরোধ তৈরি করতে সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে ইউক্রেন বাড়তি কিছু সুবিধা পাবে বলে মনে করেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা।
ইভলিন ফারকাস যিনি ওবামা প্রশাসনের প্রতিরক্ষা উপসহকারী সচিব হিসেবে একসময় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, কত গোলাবারুদ সরবরাহ করা হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ফারকাস বলেন, আমরা শুনেছি যে, পেন্টাগন সতর্ক করে বলেছে, এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র তাদের কাছে খুব বেশি নেই যা তারা ইউক্রেনকে সরবরাহ করতে পারে।