রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক নেতা মিন অং হ্লাইং-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করেছে। মিন অং হ্লাইং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) প্রকাশিত বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন এবং জোরপূর্বক বাংলাদেশে নির্বাসনের জন্য মিন অং হ্লাইং দায়ী বলে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর একটি নির্যাতনমূলক অভিযান চালায়। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সে সময় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মেডিসিন সান্স ফ্রন্টিয়ের (এমএসএফ) তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতার প্রথম মাসেই ৬ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়, যাদের মধ্যে ৭৩০ জন শিশু। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের ধর্ষণ এবং শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
এই বর্বরতায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও, তৎকালীন বার্মিজ নেতা অং সান সু চি তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানান। মিয়ানমার আইসিসি’র সদস্য না হওয়ায় শুরুতে এই অপরাধের জন্য বিচার সম্ভব মনে হয়নি। তবে আইসিসি’র প্রসিকিউটররা যুক্তি দেন যে, কিছু অপরাধ বাংলাদেশে ঘটেছে – যা আইসিসি’র আওতায় পড়ে।
পাঁচ বছরের তদন্ত শেষে প্রসিকিউটর করিম খান জানান, এখন একটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা চাওয়ার মতো প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই আবেদন এখন আইসিসি’র তিন বিচারকের একটি প্যানেলে যাচাই করা হবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার মামলাও চলছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো আইসিসি প্রসিকিউটরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার পরামর্শক মারিয়া এলেনা ভিগনোলি বলেছেন, এই আবেদন মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যে তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
যুক্তরাজ্যের বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের সভাপতি টুন খিন বলেছেন, আজ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এটি ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পথে আরেকটি অগ্রগতি।
মিয়ানমার বর্তমানে গৃহযুদ্ধের মধ্যে রয়েছে এবং মিন অং হ্লাইংয়ের বাহিনী বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসা মিন অং হ্লাইং আন্তর্জাতিক মহলে একঘরে হয়ে পড়েছেন।
যদিও তাকে দ্য হেগের আদালতে হাজির করা কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে, তবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এটি একটি আশা জাগানো বার্তা। মিয়ানমারের নির্মম নির্যাতনের শিকার এই জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।