নিজের ছেলে হান্টারকে নির্বাহী আদেশে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দিয়ে বিদায় বেলায় বিতর্কের জন্ম দিয়ে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বেআইনি অস্ত্র রাখা এবং কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হান্টার বাইডেন। এ মাসেই আদালতে তার শাস্তি ঘোষণার কথা ছিল।
রোববার (১ ডিসেম্বর) সম্পূর্ণ নিঃশর্ত ক্ষমার ঘোষণা করেন তিনি। এক বিবৃতিতে বাইডেন জানান, ‘হান্টারের মামলার তথ্য যাচাই করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, শুধু আমার ছেলে হওয়ার কারণে তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
এর আগে ছেলের বিচারকাজে হস্তক্ষেপ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন বাইডেন।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বাইডেন জানান, টানা আক্রমণের মধ্যেও আমরা সাড়ে পাঁচ বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করেছি।
তার এমন সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা করে বাইডেন বলেন, আমি আশা করি আমেরিকানরা বুঝতে পারবে কেন একজন বাবা এবং একজন রাষ্ট্রপতি এই সিদ্ধান্তে আসবেন।
গত সেপ্টেম্বর মাসে কর ফাঁকির মামলায় হান্টার বাইডেনের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া বন্দুক–সংক্রান্ত আলাদা মামলায় তার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। যদিও অবিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও তাকে কারাগারে যেতে হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে শাস্তি মওকুফের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে প্রেসিডেন্টের হাতে। তিনি চাইলে যে কারো দণ্ড মওকুফ করে দিতে পারেন। এক মাস ২০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডনাল্ড ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে পারবেন না।
আরো পড়ুন: হান্টার বাইডেনকে ক্ষমার ঘটনা, বিচারব্যবস্থার গর্ভপাত: ট্রাম্প
বাইডেন শেষ পর্যন্ত যে ক্ষমার ঘোষণায় সই করেছেন, সেখানে কেবল ওই দুই মামলা থেকেই নয়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সম্ভাব্য যে কোনো ফেডারেল অপরাধের শাস্তি থেকে হান্টার বাইডেনকে রেহাই দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, ওই সময়টায় ইউক্রেনীয় গ্যাস কোম্পানি বুরিসমারের পর্ষদে বাইডেনপেুত্রের দায়িত্বপালন এবং চীনসহ অন্যান্য বিদেশি কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার জন্য তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত আর করা যাবে না।
বিতর্কিত বিদেশি ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য তদন্তের মুখে ছিলেন হান্টার বাইডেন। আর ট্রাম্প বারবার বলে আসছিলেন, ওইসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
ক্ষমার ঘোষণায় জো বাইডেন বলেছেন, তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ, তার ছেলে হওয়ার কারণেই হান্টারকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং তিনি ‘ন্যায়বিচার পাননি’। একই ধরনের অভিযোগে অন্যদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, হান্টারের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো ঘটেছে ‘অন্যভাবে’।
বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ভাষ্য, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কংগ্রেসে তার ছেলের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এগিয়ে নিয়েছে কেবল তাকে ‘আক্রমণ’ করার জন্য এবং তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য।
বিবিসি লিখেছে, বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত ডেমোক্রেটিক শিবিরে বিভক্তি তৈরি করেছে। দলের নেতাদের কেউ কেউ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত, তাদের মতে হান্টার বাইডেনের বিচার ছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অন্যায্য’। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রেসিডেন্ট নিজের ছেলেকে ক্ষমা করে একটি বাজে নজির গড়লেন।
কলোরাডোর গভর্নর জ্যারেড পলিস এক্স-এ লিখেছেন, “একজন বাবা হিসাবে আমি বুঝতে পারি, ছেলেকে ক্ষমা করে দিয়ে বাইডেন তাকে সাহায্য করতে চেয়েছেন, আর সেটা সহজাত। কিন্তু তিনি তার পরিবারকে দেশের চেয়ে এগিয়ে রেখেছেন, সে কারণে আমি হতাশ। এটা এমন একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল, পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা যার অপব্যবহার করার সুযোগ পাবেন এবং দুঃখজনকভাবে তার (বাইডেনের) সুনাম নষ্ট করবে।”
অন্যদিকে রিপাবলিকান শিবির প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেছে।
প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য মার্জোরি টেইলর-গ্রিন বলেছেন, ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাইডেন স্বীকার করে নিলেন যে হান্টার একজন ‘অপরাধী’ এবং তিনি নিজে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন ‘মিথ্যাবাদী ও ভণ্ড’।