বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। রোববার হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় প্রথম যে তিন নারীকে মুক্তি দেয়া হবে তাদের তালিকা প্রকাশ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি কার্যকর হলো।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রোববার (১৯ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ১১টায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসকে ৩৩ জিম্মির তালিকা দিয়েছে তারা।
এদিকে চুক্তি কার্যকরের জেরে পদত্যাগ করেছেন ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গাভির।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেছেন, বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে আজ আমরা রোমি গোনেন (২৪), এমিলি দামারি (২৮) ও ডোরন স্টেইনব্রেচারের (৩১) মুক্তি দিতে যাচ্ছি।
ফিলিস্তিনের গাজায় স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো এই সময়ের পর গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এই হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে আল-জাজিরার লাইভে বলা হয়, উত্তর গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছেন তিনজন। গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন ছয় জন। রাফায় নিহত হয়েছেন একজন। এছাড়া, ২৫ জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, হামাসের টেলিগ্রাম গ্রুপে দেয়া এক পোস্টে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা প্রথমে রোমি গোনেন, এমিলি দামারি এবং ডোরন স্টেইনব্রেচারের মুক্তি দিবেন।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ডোরনের বয়স ৩১। তিনি একজন পশু চিকিৎসক নার্স। হামাসের আক্রমণের সময় তিনি কিবুৎজ কাফার আজাতে তার ফ্লাটে ছিলেন।
এমিলি দামারির বয়স ২৮। তার ব্রিটিশ-ইসরাইলের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে।
২৪ বছর বয়সী রোমি গোনেন সুপারনোভা উৎসব থেকে পালানোর চেষ্টা করলেও তিনি হামাসের হাতে ধরা পড়েন।
গত শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন করে।
চুক্তি অনুমোদনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগও। তবে চুক্তিটি ইসরাইলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ধারণা করা হচ্ছে, এই চুক্তি শেষ পর্যন্ত সফলভাবে বাস্তবায়ন শুরু হলে গাজাবাসীর জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতাও কমে আসতে পারে। গাজা যুদ্ধ ঘিরেই লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকে হিজবুল্লাহ ও হুতির মতো ইরানপন্থি বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরাইল।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইল ও হামাসের ঐকমত্যের বিষয়টি গত বুধবার সামনে আনে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার।
গাজায় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে চলা সহিংসতার শুরুর দিকে একবার মাত্র অল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি হয়েছিলো। এরপর যুদ্ধবিরতির জন্য দফায় দফায় আলোচনা হয়। তবে আশার আলো দেখা যায়নি। সম্প্রতি চুক্তির জন্য জোর তৎপরতার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিরা।