প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীরা। আগামী মার্চের শেষে পুনরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে আশ্বাস দেন আসিফ নজরুল। উপদেষ্টার আশ্বাসে আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।
এর আগে বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল থেকে রাজধানীর কাওরানবাজার মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীরা। দুই ঘণ্টা অবস্থান করার পর পুলিশ তাদেরকে রাস্তার এক পাশে সরিয়ে দেয়। এরপর তারা মিছিল নিয়ে ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে যান। দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রবাসী কল্যাণ সচিব মো. রুহুল আমিন এবং দুই সদস্য উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে দেখা করেন।
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন বাবু বৈঠক শেষে জানান, আমরা উপদেষ্টাকে জানিয়েছি যে, আমাদের কারো ম্যানপাওয়ার হয়েছে, কারো ভিসা হয়েছে, আবার কেউ কেউ টিকিটের জন্য যেতে পারেননি। উনি আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন। উপদেষ্টা বলেছেন, যাদের ম্যানপাওয়ার হয়েছে, ই-ভিসা হয়েছে, তাদেরকে আগামী মার্চের শেষে পর্যায়ক্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা হবে। যাদের ম্যানপাওয়ার হয়নি তাদেরকে পরবর্তী সময়ে পাঠানো হবে। এর বাইরে যারা টাকা দেয়ার পরো কিছুই হয়নি, তাদের বিষয়ে বলেছেন— যাদেরকে টাকা দেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিতে। মন্ত্রণালয় তাদেরকে বোয়েসেলের মাধ্যমে অন্যকোনও দেশে পাঠাবে।
মাইন উদ্দিন আরো বলেন, তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, মালয়েশিয়া যদি কেউ নাও যেতে পারেন, তাদেরকে অন্য দেশে পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার দেবে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে —উপদেষ্টা তার কথায় এবং কাজে মিল রাখবেন। তাই আমরা তার আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলন এখানে সমাপ্ত ঘোষণা করছি।
মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের আগে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া মাইন উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের মধ্য থেকে চার জন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবো। সেখানে আমাদের দাবি তুলে ধরবো। এরপর আন্দোলন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবো।’
ভিসা থাকার পরো মালয়েশিয়া যেতে না পারা ১৮ হাজার কর্মীকে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রুহুল আমিন। বুধবার (২২ জানুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
সচিব বলেন, আমরা এখানে দুই ধরনের কাজ করছি। একটি হচ্ছে যারা যেতে পারেনি তাদেরকে আবার মালয়েশিয়াতে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত যারা যেতে পারেনি, কিন্তু যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, সেগুলো পরিশোধ করা। সম্প্রতি আমাদের হাইকমিশন থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে দুটি মিটিং করেছে। মিটিংগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের কিছু দিক নির্দেশনা ঠিক করার আছে। অর্থাৎ কী পদ্ধতিতে তারা যাবেন, কর্মীদের যাতে আর কোনও হয়রানি না হয়, সেগুলো নিয়ে কথা চলছে। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির শেষে আরেকটা মিটিং হবে, আমাদের পক্ষ থেকে যা যা তথ্য দেওয়া প্রয়োজন দেওয়া হয়েছে। আমরা যেভাবে তাদের কাছে গিয়েছি, ওনারা নীতিগতভাবে অনেক বিষয় মেনে নিয়েছেন, যাতে কর্মীদের জন্য আর কোনও নতুন বোঝা তৈরি না হয়। তারপরও আমরা প্রস্তাব দিয়েছি— সেটি নিয়ে তারা তাদের মিনিস্ট্রি পর্যায়ে কথা বলবেন। তবে প্রাথমিকভাবে তারা একমত হয়েছেন, শুরু হবে হয়তো ধাপে ধাপে হবে। আমরা আশা করছি, যেভাবে আলোচনা চলছে খুব বেশি দেরি হবে না।
সচিব বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। দুই-এক দিন আগ পর্যন্ত আমাদের কাছে আপডেট আছে— ৮১ শতাংশ এজেন্সি টাকা ফেরত দিয়েছে। এরপরো যারা টাকা দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে টাকা ফেরত নেওয়া। একইসঙ্গে কর্মীরা যাতে যেতে পারেন, সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়া প্রবেশের শেষ সময়ের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কর্মী সেদেশে যেতে পারেনি। দীর্ঘদিন ধরে তারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। এর মধ্যে অনেকেই টাকা ফেরত পাওয়ার কথা থাকলেও পাননি।