
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প-মোদির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
মোদির এ সফরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও বাণিজ্যের মতো দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে কী ধরনের আলোচনা হতে পারে, সে বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো থেকে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। এর আগে, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও উষ্ণ সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছেন ট্রাম্প। তবে নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার অতীতের সম্পর্ক বিশ্লেষণ সাপেক্ষে বর্তমান পরিস্থিতিকে বিবেচনা করা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আবার রাজনীতিবিদরা বলছেন, এ আলোচনায় বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোই বাড়তি মনোযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে ঢোকা নথিহীন ১০৪ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ভারতীয়দের অভিযোগ, এ অভিবাসীদের উড়োজাহাজে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছে হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, ২০২২ সাল থেকে প্রায় ৭ লাখ ২৫ হাজার ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এ ধরনের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এখন অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে ট্রাম্প প্রশাসন। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানরত ভারতীয় অভিবাসীরা।
ঠিক এমন মুহূর্তে দুই দেশের দুই প্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠক আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দুই দেশ তাদের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগী থাকবে বলে আমি মনে করি। এমন অনেক বিষয় আছে, যেখানে তাদের মতের পার্থক্য হওয়ার অবকাশ রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ অভিবাসী, শুল্ক, বাজারে ঢোকার সুযোগসহ অন্য দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোয় তারা নিজেরাই ব্যস্ত থাকবেন। ভারত যে বাজেট দিয়েছে, সেখানে অনেক জায়গায় শুল্ক সুবিধা ঘোষণা করেছে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আকর্ষণীয় মনে হতে পারে।
আবার যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে রফতানি করায় ভারতের জন্য এটি চিন্তার কারণ। কাজেই তাদের বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ আছে বলে মনে হয়। এর পাশাপাশি আলোচনায় অবশ্যই চীনের ইস্যু উঠে আসতে পারে। যেখানে উভয় দেশের জন্যই চীন উদ্বেগের কারণ। আমার ধারণা, ওয়াশিংটন-দিল্লি এগুলোয়ই ব্যস্ত থাকবে।
’ তিনি আরো বলেন, ‘আঞ্চলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো বাংলাদেশ বিষয়টা উঠতে পারে। আবার নাও উঠতে পারে। কিন্তু এখনকার যে বাতাবরণে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি খুব বেশি গুরুত্ব পাবে বলে আমি মনে করছি না। বরং তাদের অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়ে আছে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠতে পারে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ মুহূর্তে আগে থেকে কিছু বলতে পারি না। তবে সেখানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আমার ধারণা, যেসব বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, সেগুলোর অন্যতম এটি একটি।’