
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষের পথে; আর দু’-তিন দিনের মধ্যে চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার কথা। তবে সেই পর্বে প্রবেশের জন্য ৪টি শর্ত রেখেছে ইসরায়েল।
যদি এই চার শর্ত পূরণ না হয়, সেক্ষেত্রে চুক্তির প্রস্তাবিত ২য় পর্যায় শুরুর ব্যাপারটি পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে জানিয়েছেন দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী এবং যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এলি কোহেন।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল কান-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে কোহেন বলেন, “যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ৪টি শর্ত রয়েছে— ক) ৭ অক্টোবর এবং তার আগে যেসব ইসরায়েলিকে গাজায় বন্দি করা হয়েছিল— তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে, খ) গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে গাজা থেকে বিদায় নিতে হবে, গ) গাজা উপত্যকাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করতে হবে এবং ঘ) পুরো গাজা এলাকায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ থাকবে।”
গত ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরেও নিয়ে যায় তারা। বস্তুত ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর এর আগে কখনও ইসরায়েলে এত বড় আকারের হামলা ঘটেনি।
অতর্কিত সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। প্রায় ১৫ মাস ধরে অভিযান চলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।
গাজায় সংঘাত থামাতে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন একটি তিন স্তরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রস্তাব করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৯ জানুয়ারি থেকে মূলত সেই চুক্তিটিরই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
এই চুক্তির প্রথম পর্বের মেয়াদ ছিল ৬ সপ্তাহ। এ পর্বে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস, যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এই পর্বে, তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীরা প্রাধান্য পাবেন।
এর বিনিময়ে গাজার জনবসতিপূর্ণ সব এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ইসরায়েল, কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শতাধিককে মুক্তি দেবে এবং এ ছয় সপ্তাহের প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে ত্রাণ পণ্যবাহী ৬০০টি ট্রাক।
দ্বিতীয় পর্যায়ে স্থায়ীভাবে সংঘাত শেষ হবে গাজায়। চুক্তির শর্ত অনুসারে, এ পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস এবং বিনিময়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১ হাজার জনকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল এবং উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
আর তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে।
তবে চুক্তিতে এ-ও উল্লেখ ছিল যে যতদিন দ্বিতীয় পর্যায় শুরু না হয়, ততদেন প্রথম পর্যায় অব্যাহত থাকবে।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি