
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় যাচ্ছেন মধ্যস্থতাকারী মার্কিন প্রতিনিধিরা। এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির কুরস্ক অঞ্চলে সফর করছেন।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা। এতে ৩০ দিনের জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকরে সম্মত হয়েছে কিয়েভ। এরপরই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কোয় যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘বল এখন (যুদ্ধবিরতি নিয়ে) পুরোপুরি রাশিয়ার কোর্টে।’ তিনি আরও বলেন, একমাত্র শান্তি আলোচনার মধ্য দিয়েই যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে।
অন্যদিকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা যাচাই করে দেখছে। এ নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপ হতে পারে।
জেদ্দায় আলোচনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির ‘ইতিবাচক’ প্রস্তাব নিয়ে রাশিয়াকে রাজি করানোর ভার এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।
হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে গতকাল বুধবার আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্যতা নিয়ে তিনি ‘ইতিবাচক বার্তা’ পেয়েছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘তবে এই ইতিবাচক বার্তাই সবকিছু নয়। এটা খুবই গুরুতর একটি পরিস্থিতি।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন কর্মকর্তা আলোচনার জন্য মস্কো যাচ্ছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প।
এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছিল, জেদ্দায় ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ পরবর্তী আলোচনার জন্য মস্কোয় যেতে পারেন।
গতকাল হোয়াইট হাউস এ পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসে এক বৈঠকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গেও বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এর জেরে ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়া এবং গোয়েন্দা তথ্যের আদান–প্রদান বন্ধের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। এরপর জেদ্দায় প্রথমবারের মতো মার্কিন-ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন।
কুরস্কে ভ্লাদিমির পুতিন
যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অগ্রগতি দেখিয়েছে দেশটির বাহিনী। ইতিমধ্যে তারা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা পাঁচটি গ্রাম দখল করেছে। গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে রাশিয়া।
এর মধ্যেই ক্রেমলিন জানিয়েছে, গতকাল কুরস্কের একটি কমান্ড পোস্ট পরিদর্শন করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই কমান্ড পোস্টে রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের পাশে হেঁটে যাচ্ছেন পুতিন। তাঁরা দুজনই যুদ্ধকালীন পোশাক পরে ছিলেন।
গত আগস্ট থেকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা দখলে নিতে শুরু করে ইউক্রেনের বাহিনী। অঞ্চলটিতে যুদ্ধ জোরালো হয়। এরপর এবারই প্রথম কুরস্কে গেলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফরকালে সেনাবাহিনীকে কুরস্ক অঞ্চলটিকে পুরোপুরি মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবরতির প্রস্তাব নিয়ে পুতিন এখনো কোনো মন্তব্য করেননি।