
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন কুর্সিতে বসেছেন তিন মাসও পার হয়নি। এর মধ্যেই তাকে ঘিরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার আমেরিকান।
শনিবার (৫ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল থেকে নিউ ইয়র্ক, কলোরাডো, হিউস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস এমনকি, ওয়াশিংটনের রাস্তাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মিছিল করছেন মানুষ। আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের অন্তত ১২০০টি এলাকায় শনিবার মিছিল এবং জমায়েত হয়েছে। বার্তা একটাই, ‘আমেরিকার কোনও রাজা নেই। আমেরিকায় ফ্যাসিবাদ চলবে না।’ ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটাই আমেরিকায় সবচেয়ে বড় বিরোধী বিক্ষোভ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার ওয়াশিংটনের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং হালকা বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেয় বেশ কিছু সংগঠন। ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয় অসংখ্য মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুল্কনীতির আড়ালে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের কর্তৃত্ববাদী রূপের বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞানী, শিল্পী, শিক্ষক, এমনকি সাধারণ গৃহিণীও। তাদের মতে, এই শুল্কনীতি শুধু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নয়, খাদ্য, প্রযুক্তি ও জ্বালানির দামকেও প্রভাবিত করছে।
শনিবারের এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে,‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। এসব বিক্ষোভে ১৫০টির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে।
ট্রাম্প বিরোধী এ বিক্ষোভের জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ব্যানার হাতে জড়ো হয়েছেন প্রায় ২০০ প্রতিবাদকারী, যাদের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি, যা বিশ্ব বাণিজ্যের ওপর একতরফা হস্তক্ষেপ বলে মনে করছেন তারা।
একইদিনে প্যারিসের রাস্তায়ও দেখা গেছে শত শত মানুষকে। তারা জানান ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং ইউরোপের অর্থনীতির জন্যও ধ্বংসাত্মক। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট ও বার্লিনেও একইরকম প্রতিবাদ হয়েছে। তবে সমালোচনার বিপরীতে ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল । যুক্তরাষ্ট্রকে আবার স্বনির্ভর করতে চান ট্রাম্প, এমনটাই দাবি তাদের।
বিশ্বজুড়ে যখন সহনশীল বাণিজ্যনীতির প্রয়োজন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক আরোপ নতুন বিভাজনের সূত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের এই নীতির প্রতিবাদ তাই শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং এক বৈশ্বিক প্রতিরোধে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।