
আমেরিকার নয়া শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চিন ছাড়া বাকি সব দেশের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দেশগুলোকে শুল্কে আপাতত স্বস্তি দিলেও চিনের ওপর শুল্ক আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের ঘোষণা অনুসারে, চিনা পণ্যের ওপর এবার ১২৫ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য্য হবে। খবর সিএনএনএর।
আমেরিকার বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর সম্প্রতি ‘পারস্পরিক শুল্কে’র কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তালিকায় চিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি ভারত বা ইজ়রায়েলের মতো আমেরিকার ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ও ছিল। হোয়াইট হাউস থেকে গত সপ্তাহেই জানানো হয়, এই শুল্কনীতির বিষয়ে অনেক দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে। হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক কাউন্সিলের অধিকর্তা কেভিন হ্যাসেট জানিয়েছিলেন, ৫০টিরও বেশি দেশ আমেরিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে আমেরিকার অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। গত সপ্তাহে আমেরিকায় ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে ব্যাপক পরিসরে আন্দোলন হয়েছিল মার্কিন মুলুকে। হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি-সহ আমেরিকার সব বড় শহরে মার্কিন জনতা ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল তাঁর শুল্কনীতিও।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক শুল্কনীতিতে অন্য দেশগুলি যেমন প্রভাবিত হয়েছে, তেমন প্রভাব পড়েছে মার্কিন মুলুকেও। আমেরিকার শেয়ার বাজারে এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে ওয়াল স্ট্রিটের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি শুল্কনীতির জন্য আমেরিকার বাজারে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে চিন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর নয়া শুল্কনীতি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প। যদিও কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত হোয়াইট হাউস থেকে মেলেনি।
ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে চিনের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানির দিকে। দু’দেশের শুল্ক সংঘাতের আবহে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেই চিনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। পরে বুধবার তা আরও ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। পাল্টা মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে চিন। তার পরে ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেন চিনা পণ্যের ওপর। মোট শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০৪ শতাংশ। ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করতেই ফের ‘প্রত্যাঘাত’ করে চিন। পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপায় বেজিং। পরিস্থিতি দাঁড়ায়, আমেরিকার বাজারে চিনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক বনাম চিনা বাজারে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক! দুই দেশের মধ্যে এই শুল্ক সংঘাতের আবহেই বুধবার রাতে চিন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখলেন ট্রাম্প। চিনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে ১২৫ শতাংশ করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, “বিশ্ব বাজারের প্রতি কোনও সম্মান দেখায়নি চিন।” সেই কারণেই চিনের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত।